পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/২৯২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৯২
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

কানে পৌঁছাইলে তাহার যে খুবই আনন্দ হইল, তাহাতে আর সন্দেহ কি?

 এ সকল সিংহনাদ কর্ণের সহ্য না হওয়ায়, তিনি আসিয়া ভীমের সহিত মহাযুদ্ধ আরম্ভ করিয়া দিলেন। কিন্তু খানিক পরেই ভীমের বাণে তাহার ধনুক, ঘোড়া আর সারথি কাটা যাওয়াতে তাহাকে গিয়া বৃষসেনের রথে আশ্রয় লইতে হইল।

 কিন্তু কর্ণ ছাড়িবার লোক নহেন। তিনি আবার আসিয়া ভীমকে বলিলেন, “কি হে পাণ্ডুপুত্র। তুমিও আবার যুদ্ধ করিতে জান নাকি। বড় যে পলাইতেছ?”

 সুতরাং আবার তাহাদের যুদ্ধ আরম্ভ হইল। এবারেও কর্ণ অনেকক্ষণ যুদ্ধ করিয়া শেষে দেখিলেন যে, আবার তাহার ধনুক ঘোড়া সারথি সব কাটা গিয়াছে! তারপর ভীমের অস্ত্র বুকে বিঁধিয়া তাহার প্রাণ যায় যায়! সুতরাং তিনি তাড়াতাড়ি অন্য রথে উঠিয়া পলায়ন করিলেন।

 তথাপি কর্ণের লজ্জা নাই, তিনি আবার আসিয়া ভীমকে আক্রমণ করিলেন। এবারে ধনুক সারথি আর ঘোড়া কাটা গিয়া তাহার দুরবস্থার একশেষ হইতেছে দেখিয়া, দুর্যোধন তাড়াতাড়ি দুর্জয়কে সাহায্য করিতে পাঠাইলেন। কিন্তু সে বেচারা ভালো করিয়া সাহায্য করিবার পূর্বেই মরিয়া গেল।

 যাহা হউক, এবারে কর্ণকে আর পলাইতে হইল না; তাহার জন্য অস্ত্রশস্ত্র সমেত এক নূতন রথ আসিয়া উপস্থিত হইল। দুঃখের বিষয় এই যে ভীম সে রথেরও ঘোড়া আর সারথি সংহার করাতে, তাহাতে চড়িয়া কর্ণের যুদ্ধ করা হইল খুব কমই। এমন সময় দুর্মুখ কর্ণের সাহায্য করিতে আসিলেন। সাহায্য যাহা করিলেন তাহা একটু নূতনরকমের বটে, আর তিনি ইচ্ছা করিয়া যে সেরূপ করিয়াছিলেন, তাহাও অবশ্য কখনোই নহে, কিন্তু তাহাতেই কর্ণের প্রাণ রক্ষা হইল। দুর্মুখ আসিয়াই তো অমনি ভীমের হাতে প্রাণত্যাগপূর্বক, নিজের রথখানি খালি করিয়া দিলেন সে-রথের ঘোড়াগুলি ছিল বড়ই চমৎকার! সুতরাং কিঞ্চিৎ পরেই যখন ভীমের হাতে কর্ণেরও দুর্দশার একশেষ হইল, তখন ঐ ঘোড়াগুলির সাহায্যে তিনি সহজেই রণস্থল হইতে পলায়ন করিলেন।

 তারপর ভীম দুর্যোধনের আর পাঁচটি ভাইকে বধ করিলে, কর্ণ আবার যুদ্ধ করিতে আসেন আর দেখিতে দেখিতে তাহার হাতে জব্দও হন। তাহা দেখিয়া দুর্যোধন তাহার সাতটি ভাইকে পাঠাইবামাত্র, তাহারাও ভীমের হাতে মারা যায়। তারপর আবার কর্ণ আসিয়া উপস্থিত হইলেন।

 এবারেও ভীমের হাতে কর্ণের দুর্দশা দেখিয়া দুর্যোধন তাহার আর সাতটি ভাইকে বলিলেন, “তোমরা শীঘ্র গিয়া উহাকে বাঁচাও!” হায়! কে কাহাকে বাঁচায়? সাতভাই ভালো করিয়া যুদ্ধ করিতে না করিতেই মরিয়া গেল। তারপর কর্ণের মাথায় কি যে গোল লাগিল তিনি পাণ্ডবদিগকে ছাড়িয়া কৌরবদিগকেই মারিতে আরম্ভ করিলেন।

 কিন্তু ইহার পর হইতেই যেন কর্ণের তেজ আবার ফিরিয়া আসিল। তখন দেখা গেল যে, অনেকক্ষণ দুজনে সমানভাবে যুদ্ধ চলার পর, কর্ণ ক্রমেই ভীমকে কাবু করিয়া আনিতেছে। ক্রমে ভীমের তৃণ, ধনুর গুণ, ঘোড়ার রাশ, সবই কাটা গেল। সারথিটি বাণ খাইয়া অন্য রথে আশ্রয় লইল। ধবজ, পতাকা, কিছুই আস্ত রহিল না। একটা শক্তি ছুঁড়িয়া মারিলেন, তাহও কাটা গেল। শেষে রহিল খড়্গ ও চর্ম। চর্মখানি কর্ণ কাটিয়া ফেলিলেন।