পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩০
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

নদীর জল ফেনিয়ে গেল।

 অমনি ধপাস করে হাতির লেজটা খসে পড়ে গেল!

 তারপর হাতি গাছতলা দিয়ে যাচ্ছে, গাছ তাকে দেখে বললে, ‘বাঃ রে, তোর একি হল? লেজ কোথায় গেল?’

 হাতি বললে, ‘তা যদি বলি, তবে কিন্তু তোর পাতাগুলি সব এক্ষুনি ঝড়ে পড়বে।’

 গাছ বলল, ‘পড়ে পড়ুক, তুই বল।’ তখন হাতি বললে—

উকুনে বুড়ি পুড়ে মোলো,
বক সাতদিন উপোস রইল,
নদীর জল ফেনিয়ে গেল,
হাতির লেজ খসে পড়ল।

 অমনি ঝরঝর করে গাছের সব পাতাগুলি ঝড়ে পড়ে গেল। সেই গাছে এক ঘুঘুর বাসা ছিল। সে তখন খাবার খুঁজতে গিয়েছিল। ফিরে এসে দেখে, ওমা একি হয়েছে! ঘুঘু বললে, ‘গাছ, তোর একি হল? তোর পাতা সব কোথায় গেল?’

 গাছ বললে, ‘তা যদি বলি, তবে কিন্তু তোর চোখ কানা হয়ে যাবে।’

 ঘুঘু বললে, ‘যায় যাবে, তুই বল।’ তখন গাছ বললে—

উকুনে বুড়ি পুড়ে মোলো,
বক সাতদিন উপোস রইল,
নদীর জল ফেনিয়ে গেল,
হাতির লেজ খসে পড়ল,
গাছের পাতা ঝড়ে পড়ল।

 অমনি টস্ করে ঘুঘুর একটা চোখ কানা হয়ে গেল।

 কানা চোখ নিয়ে ঘুঘু মাঠে চরতে গিয়েছে, তখন রাজার বাড়ির রাখাল তাকে দেখে বললে, ‘সে কি রে ঘুঘু, তোর চোখ কি হল?’

 ঘুঘু বললে, ‘তা যদি বলি, তবে কিন্তু তোমার হাতে তোমার লাঠিটা আটকে যাবে।’

 রাখাল বললে, ‘যায় যাবে, তুই বল।’ তখন ঘুঘু বললে—

উকুনে বুড়ি পুড়ে মোলো,
বক সাতদিন উপোস রইল,
নদীর জল ফেনিয়ে গেল,
হাতির লেজ খসে পড়ল,
গাছের পাতা ঝড়ে পড়ল,
ঘুঘুর চোখ কানা হল।

 অমনি চটাস করে রাখালের লাঠি তার হাতে আটকে গেল। সে কত হাত ঝাড়লে, কিছুতেই তাকে ফেলতে পারলে না। যখন গোরু নিয়ে সে রাজার বাড়িতে ফিরে এসেছে, তখনো সে হাত ঝাড়ছে।