পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৩০৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩০৬
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

 তখন যুধিষ্ঠির অন্য রথে চড়িয়া পলায়নের আয়োজন করিলে, কর্ণ অমনি ছুটিয়া গিয়া, তাহার কাঁধে হাত দিলেন।

 এমন সময় শল্য বলিলেন, “কর কি সূতপুত্র! উহাকে ধরিলেই উনি তোমাকে ভস্ম করিয়া ফেলিবেন।”

 যাহা হউক, কুন্তীর কথা কর্ণের মনে ছিল; তাই তিনি যুধিষ্ঠিরের আর কোনো অনিষ্ট করিলেন না, কেবল কিছু গালি দিয়াই তাহাকে ছাড়িয়া দিলেন। যুধিষ্ঠিরকে হারিতে দেখিয়া, কৌরবেরা তাহার সৈন্য মারিয়া শেষ করিতে লাগিল, আর ভীম, সাত্যকি প্রভৃতি বীরগণের হাতে তাহার শাস্তিও পাইল ভালো মতোই। দুর্যোধন চিৎকারপূর্বক তাহাদিগকে বলিতে লাগিলেন, “তোমরা পলায়ন করিও না, পলায়ন করিও না।” কিন্তু তাহার কথা কে শুনে।

 ইহা দেখিয়া কর্ণ শল্যকে বলিলেন, “শীঘ্র ভীমের নিকট রথ লইয়া চল।” ভীম তখন কর্ণের সহিত যুদ্ধ করিবার জন্য সিংহনাদপূর্বক সেই দিকেই আসিতেছিলেন। তাহা দেখিয়া শল্য কর্ণকে বলিলেন, “ঐ দেখ ভীম আসিতেছে। আজ সে তাহার বহুদিনের রাগ তোমার উপর ঝাড়িবে!”

 তারপর ভীমের আর কর্ণের ঘোরতর যুদ্ধ হইল। যুদ্ধ করিতে করিতে ভীম কর্ণকে এমনি ভয়ঙ্ককর বাণ ছুঁড়িয়া মারিলেন যে, তাহা পর্বতে লাগিলে পর্বতও ফাটিয়া যাইত। সে বাণ খাইয়া আর কর্ণকে যুদ্ধ করিতে হইল না। তিনি তখনি চিৎ হইয়া রথের ভিতরে পড়িয়া অজ্ঞান হওয়ায় শল্য তাকে সেখান হইতে লইয়া গিয়া তাহার প্রাণরক্ষা করিলেন।

 কর্ণের পরাভব দেখিয়া দুর্যোধন তাহার ভাইদিগকে যুদ্ধে পাঠাইলেন। তারপর সে বেচারাদের যে দুর্দশা। যুদ্ধ ভালো করিয়া আরম্ভ হইতে না হইতেই তাহাদের ছয়জন মরিয়া গেল। আর সকলে তখন ভাবিল, বুঝি যম আসিয়াছে। কাজেই তাহারা ঊধর্বশ্বাসে পলায়ন করিল।

 তখন আবার কর্ণ আসিয়া ভীমকে আক্রমণ করাতে, ভীম এক বিশিকের ঘায় তাহাকে অস্থির করিয়া দিলেন। কর্ণ তথাপি তাহাতে না চটিয়া ভীমের ধনুক আর রথ চূর্ণ করিলেন। তাহাতে ভীম মহারোষে গদা লইয়া এমনি যুদ্ধ আরম্ভ করিলেন যে, কৌরবদিগের সাতশত হতি দেখিতে দেখিতে ঘণ্ট হইয়া গেল। তখন আর কৌরবদের পলায়ন ভিন্ন কথা নাই।

 এদিকে কর্ণ যুধিষ্ঠিরকে সামনে পাইয়া, তাহাকে এমনি তাড়া করিয়াছে যে, তিনি পলাইবার পথ পান না। তাহাতে ভীম ছুটিয়া আসিয়া আবার কর্ণকে আক্রমণ করিলেন। ততক্ষণে কৃপ অশ্বত্থামা, কৃতবর্মা প্রভৃতি বীরগণও সেখানে উপস্থিত হইলে অনেকক্ষণ সাংঘাতিক যুদ্ধ চলিল!

 অর্জুন এই সময়ে সংশপ্তক, নারায়ণী সৈন্য প্রভৃতির সহিত ঘোরতর যুদ্ধে ব্যস্ত। উহাদের মধ্যে সুশর্মা অর্জুনের সহিত ভয়ানক যুদ্ধ করেন, এমনকি, একবার তাহাকে অজ্ঞান করিতেও ছাড়েন নাই। অর্জুন ঐন্দ্রান্ত্র মারিয়া তাহাদের সকলকেই জব্দ করিয়া দিলেন।

 অশ্বথামা আর যুধিষ্ঠিরে অনেকক্ষণ খুব যুদ্ধ হইয়াছিল। এই যুদ্ধে সাত্যকি মাঝে মাঝে যুধিষ্ঠিরের সাহায্য করিয়াছিলেন। কিন্তু অশ্বত্থামার বাণে যুধিষ্ঠির ক্রমে এমনই আচ্ছন্ন হইয়া পড়িলেন যে, তখন আর তাহয় সেখান হইতে প্রস্থান করা ভিন্ন উপায় রহিল না।

 অশ্বখামা সেদিন অর্জুনের সঙ্গেও কম যুদ্ধ করেন নাই। এমনকি, তাহার তেজে অর্জুনকে