পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৩১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩১০
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

নহিলে নিশ্চয় মারা যাইবে।” কিন্তু দুর্যোধন সেই উপকারী বন্ধুর কথায় কান দিলেন না। তিনি বলিলেন, “অর্জুন বড়ই ক্লান্ত হইয়াছে কর্ণ এখনি তাহাকে বধ করিবেন।”

 এদিকে কর্ণ আর অর্জুনের যুদ্ধ আরম্ভ হইয়াছে। যোদ্ধারা সিংহনাদ করিয়া আর চাদর উড়াইয়া তাহাদিগকে উৎসাহ দিতেছে। এমন যুদ্ধ কি সচরাচর হয়? তাই আজ দেবতারা অবধি, আকাশ পরিপূর্ণ করিয়া, তামাশা দেখিতে আসিয়াছে।

 বাণ বাণ! কেবলই বাণের পর বাণ। অর্জুন মারেন, কর্ণ কাটেন; কর্ণ মারেন, অর্জুন কাটেন। অর্জুনের এক বাণে পৃথিবী, আকাশ সূর্য অবধি জ্বলিয়া উঠিল। যোদ্ধাদের কাপড়ে আগুন! বেচারারা বুঝি পলাইবার পূর্বেই মারা যায়। উহার নাম আগ্নেয়-অস্ত্র। উঃ! কি ঘোরতর হড়-হড় ধকধক শব্দ! গেল বুঝি সব!

 ঐ দেখ, কর্ণ বরুণাস্ত্র ছুঁড়িয়াছে। ঐ কালো কালো মেঘে আকাশ ছইয়া গেল! কি ঘোর অন্ধকার! কি ভয়ানক বৃষ্টি! সৃষ্টি বুঝি তল হয়!

 অমনি দেখ, কি বিষম ঝড় বহিল! মেঘ বৃষ্টি উড়াইয়া নিল;সৃষ্টি বাঁচিল! অর্জুন বায়ব্য অস্ত্র মারিয়াছে, তাহাতেই এত ঝড়!

 আর একটা অস্ত্র আরো ভীষণ। ইহা অর্জুন ইন্দ্রের নিকট পাইয়াছিলেন। অস্ত্রের অদ্ভুত গুণে গাণ্ডীব হইতে কত সুর, কত নালীক, কত অঞ্জলীক, কত নারাচ, কত অর্ধচন্দ্রই বাহির হইতেছে। এবারে বুঝি আর কর্ণের রক্ষা নাই।

 কিন্তু কর্ণ মরিলেন না। তিনি ভার্গবাস্ত্রে অর্জুনের সকল অস্ত্র দূর করিলেন। আর লোকও মারিলেন কতই। কর্ণের কি অসীম তেজ! কৃষ্ণ আর অর্জুনকে তিনি কি ব্যস্তই করিলেন! তখন ভীম ক্রোধভরে বলিলেন, “ও কি, অর্জুন! মন দিয়া যুদ্ধ কর!”

 কৃষ্ণ বলিলেন, “অর্জুন! তোমার উৎসাহ দেখিতেছি না কেন?”

 তাহাতে অর্জুন ব্রহ্মাস্ত্র মারিলে কর্ণ তাহাও কাটিতে ছাড়িলেন না। কিন্তু ইহার পর যে অর্জুন আর একটা ব্রহ্মাস্ত্র মারিলেন, সে বড়ই ভয়ানক! কত যোদ্ধাই তাহাতে মরিল। কিন্তু তথাপি বাণক্ষেপে ত্রুটি নাই বৃষ্টিধারার মতো তাহার বাণ পড়িতেছে।

 তখন অর্জুনের আঠারোটি বাণ ছুটিয়া চলিল। তাহার তিনটি বিধিল কর্ণের গায়ে, একটিতে কাটিল তাহার ধবজ, আর চারটি খাইলেন শল্য। বাকি দশটিতে রাজপুত্র সভাপতির মাথাটি কাটা গেল। বাণের আর অন্তই নাই:হাতি, রথী, পদাতি সবই বুঝি কাটিয়া শেষ হয়। এবারে কর্ণ কাবু হইবেন। কিন্তু হায়! অর্জুনের ধনুকের গুণ যে ছিড়িয়া গেল, এখন উপায়? কর্ণ সুযোগ পাইয়া কত বাণই মারিতেছে। কৃষ্ণকে ষাট, অর্জুনকে আট, ভীমকেও অনেক, সৈন্যগুলিকে তো অসংখ্য। সর্বনাশ হইল বুঝি; দেখ কৌরবদের কত আনন্দ।

 যাহা হউক, ঐ অর্জুনের ধনুকে আবার গুণ চড়িল। আর কর্ণের বাণের সে তেজ নাই, এখন অর্জুনের বাণেই আকাশ অন্ধকার। ঐ কর্ণের গায়ে উনিশ বাণ পড়িল, শল্যর গায়ে দশটি বিধিল। কর্ণ রক্তে লাল হইয়া গিয়াছেন।

 কিন্তু তথাপি তিনি অর্জুনকে তিন বাণ, আর কৃষ্ণকে পাঁচ বাণ মারিতে ছাড়েন নাই। ঐ পাঁচটি বাণ পাঁচটা মহাসর্প। কৃষ্ণকে বিঁধিয়া উহারা আবার কর্ণের নিকট ফিরিয়া যাইতে যাইতে, মধ্যপথে অর্জুনের ভল্লে খণ্ড খণ্ড হইল। অর্জুনের আর দশ বাণে কর্ণের কি দশা হইয়াছে দেখ। অর্জুনের কি অতুল বিক্রম, কি ভীষণ বাণ বৃষ্টি। আকাশ আঁধার হইল; কর্ণের