পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৩২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ছেলেদের মহাভারত
৩২৯

যাত্রা করিলেন। ধৃতরাষ্ট্র, কৃষ্ণ, বিদুর, সাতকি প্রভৃতিও তাঁহাদের সঙ্গে চলিলেন।

 ভীষ্মদেবের শরশয্যার চারিধারে ব্যাস, নারদ প্রভৃতি মুনির ও নানা দেশের রাজাগণ বসিয়া আছেন, এমন সময় যুধিষ্ঠির প্রভৃতিরা আসিয়া তাঁহাকে প্রণাম করিলেন। যুধিষ্ঠিরকে দেখিয়া ভীষ্ম বলিলেন, “তোমরা আসাতে আমি বড় সুখী হইলাম। এই শরশয্যার আমার আটান্ন দিন কাটিয়াছে এখন মাঘ মাসের শুক্লপক্ষ উপস্থিত৷”

 তারপর তিনি ধৃতরাষ্ট্রকে বলিলেন, “ধর্মের কথা তোমার অজানা নাই; সুতরাং আর শোক করিও না। এখন তুমি পাণ্ডবদিগকে প্রতিপালন কর৷”

 কৃষ্ণকে তিনি বলিলেন, “আমার দেহত্যাগের সময় উপস্থিত। অতঃপর আমার যেন স্বর্গলাভ হয়৷”

 সকলের প্রতি তাঁহার শেষ কথা এই হইল, “তোমরা অনুমতি কর, আমি দেহত্যাগ করি। তোমাদের বুদ্ধি যেন কদাপি সত্যকে পরিত্যাগ না করে; সত্যের তুল্য আর বল নাই৷”

 তাবপর সেই মহাপুরুষ মৌনাবলম্বনপূর্বক দেহত্যাগে উদ্যত হইলে শর সকল একে একে তাঁহাব শরীর হইতে খসিয়া পড়িতে লাগিল। ক্রমে তাঁহার দেহে একটি শরের দাগ পর্যন্ত রহিল না। দেখিতে দেখিতে তাহাব উজ্জ্বল আত্মা, তাঁহার মস্তক হইতে উঠিয়া স্বর্গাভিমুখে যাত্রা করিবামাত্র, দেবতাগণ পুষ্পবৃষ্টি এবং দুন্দুভি বাদ্য আরম্ভ করিলেন।

 এমন মহাত্মার জন্য কি আর শোক কবিতে হয়? বিদুর, যুধিষ্ঠির, ভীম, অর্জুন, নকুল, সহদেব প্রভৃতিবা তাঁহাকে মহামূল্য পট্টবস্ত্র ও উষ্ণীষ পবাইয়া তাহার উপরে উৎকৃষ্ট ছত্র ধাবণপূর্বক, চামব দোলাইতে লাগিলেন। নারীগণ তালবৃন্ত হস্তে চারিদিকে দাঁড়াইয়া ব্যজনে প্রবৃত্ত হইলেন।

 এদিকে সুমধুর সামগান আরম্ভ হইযাছে, চন্দন কাষ্ঠের চিতাও প্রস্তুত। সেই চিতার আগুনে ভীষ্মের দেহ শেষ করিয়া এবং তাঁহার উদ্দেশে জলাঞ্জলি দিয়া সকলে তথা হইতে চলিয়া আসিলেন।


আশ্বমেধিকপর্ব

 রাজ্য লাভের পর যুধিষ্ঠিরের প্রথম কীর্তি হইল অশ্বমেধ যজ্ঞ। যুধিষ্ঠিরের শোক কিছুতেই একেবারে দূর না হওয়ায়, সকলে তাঁহাকে এই মহাযজ্ঞে উৎসাহ দিতে লাগিলেন। কিন্তু ইহা অতি বৃহৎ এবং কঠিন ব্যাপার; অল্প ধন লইয়া কিছুতেই ইহাতে হাত দেওয়া যাইতে পারে না। সুতরাং যুধিষ্ঠির এ যজ্ঞ করিতে নিতান্ত ইচ্ছুক হইয়াও, ইহা আরম্ভ করিতে ভয় পাইলেন৷

উপেন্দ্র—৪২