পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৩৮০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৮০
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

কথা বলবেন, তা তারা মোটেই ভাবে নি। তারা তাতে ভারি খুশি হয়ে বলল,‘ তার জন্যে চিন্তা কি ঠাকুরদা? আমরা সব ঠিক করে দিচ্ছি। আপনি শুধু বসে বসে হুকুম দিন।’ অমনি ঠাকুরদার মুখ ভরে হাসি ফুটে উঠল, তাঁর চোখ দুটি বুজে এল। ছেলেদেব মাথায় হাত বুলিয়ে, গাল টিপে আর নাকে কানে চিমটি কেটে তিনি তাদের বিদায় করলেন।

 এবারে ঠাকুরদা যে সন্দেশ এনেছিলেন তা খেয়ে আর কারো নাক সিঁটকোতে হয় নি।

নরওয়ের দেশের পুরাণ

 আমাদের দেশের পুরাণে যেমন দেবতা আর অসুরের গল্প আছে, পুরাতন নরওয়ে আর সুইডেন দেশের পুরাণেও তেমনি সব দেবতা আর অসুরের কথা লেখা আছে।

 নরওয়ের পুরাণে আছে যে, সেকালের আগে যখন পৃথিবী বা সমুদ্র বা বায়ু কিছুই ছিল না—তখন কেবল বিশ্ব-পিতা (All father) ছিলেন। তাঁহাকে কেহ সৃষ্টি করে নাই, কেহ তাঁহাকে দেখিতে পায় না:তিনি যাহা চাহেন, তাহাই হয়। সৃষ্টির আগে চারিদিকেই শূন্য আর অন্ধকার ছিল, সেই শূন্যের মাঝখানে ছিল গিন্নুঙ্গা নামে গহ্বর। সেই গহ্বরের উত্তরে কুয়াশার দেশ, তাহার মাঝখানে হ্বারগেল্‌মির নামে ঝরনার গরম জল টগবগ করিয়া ফুটিত।

 সেই গহ্বরের দক্ষিণে মস্পেল্‌স্‌হাইম্‌, অর্থাৎ আগুনের দেশ, সুর্ৎবের নামে বিশাল দৈত্য জ্বলন্ত তলোয়ার হাতে সেই দেশে পাহারা দিত।

 সেই যে গিন্নুঙ্গা নামে গহুর, তাহার ভিতরটা ছিল বড়ই ঠাণ্ডা। হ্বারগেল্‌মির ঝরনার জল তাহাতে পড়িয়া বরফ হইয়া যাইত, সুর্ৎবের তালোয়ার হইতে আগুনের ফিনকি পড়িয়া সেই বরফকে গলাইয়া দিত। সেই আগুন আর বরফের লড়াই হইতে গিন্নঙ্গা গহ্বরের ভিতরে য়ীমির নামক অতি ভীষণ দৈত্য আর আধম্‌লা নামে গাই জন্মাইল। য়ীমির আধম্‌লাকে পাইয়া তাহার দুধ খাইতে লাগিল, আর আধম্‌লা আশপাশের বরফে লবণের গন্ধ পাইয়া তাহাই চাটিতে আরম্ভ করিল। চাটিতে চাটিতে সেই বরফের ভিতর হইতে একটি দেবতা বাহির হইলেন, তাঁহার নাম বুরি।

 এই য়ীমির হইতে অসুর আর বুরি হইতে দেবতাগণের জন্ম, আর জন্মাবধিই অসুর আর দেবতার বিবাদ। যুগ যুগ ধরিয়া সেই বিবাদ চলিতে থাকে, শেষে অনেক যুদ্ধের পর দেবতারা য়ীমিরকে মারিয়া ফেলেন। আর যত অসুর ছিল, য়ীমিরের রক্তের বন্যায় সকলেই ডুবিয়া মরে, বাকি থাকে কেবল বার্গেল্‌মির আর তাহার স্ত্রী। এই দুজনে একখানি নৌকায় করিয়া সকল জায়গায় শেষে একেবারে ব্রহ্মাণ্ডের কিনারায় গিয়া ঘর বাঁধিল। সেই স্থানের নাম হইল ‘জোতন্‌হাইম’ বা দৈত্যপুরী। সেই দৈত্যপুরীতে অসুরের বংশ বাড়িতে লাগিল, দেবতা-অসুরের বিবাদও আবার জাগিয়া উঠিল।

 এদিকে অসুর সব মরিয়া যাওয়াতে দেবতারা কিছুদিনের জন্য যেন একটু আরাম পাইলেন। তখন তাঁহাদের মনে হইল যে, চারিদিকে কেবলই শূন্য আর কুয়াশা আর আগুন আর বরফের লড়াই দেখিতে একটুও ভাল লাগে না। তাই তাঁহারা সকলে মিলিয়া যুক্তি করিলেন যে, চলো আমরা য়ীমিরের দেহ হইতে গাছপালা নদ-নদী আর পাহাড়-পর্বতের সৃষ্টি করি।