পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৪১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪১৪
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

এত গোলমাল করছিস?’

 তারা বলল, ‘গোলমাল করব না? দেখো এসে, তোমার চেয়ে কত সুন্দর একটি মেয়ে পেয়েছি!’ বলেই সেই আরশিখানা এনে তাঁর সামনে ধরল।

 সেই আরশির ভিতরে নিজের সুন্দর মুখখানি দেখে আর সূর্যের দেবতা লুকিয়ে থাকতে পারলেন না। তিনি তখনি ছুটে বেরিয়ে এলেন আর অমনি সকলে গিয়ে তাড়াতাড়ি দরজা বন্ধ করে হুড়কো এঁটে দিল।

 তখন আবার সূর্য উঠল, আবার আলো হল, আবার সংসারে সুখ এল। তারপর সবাই মিলে সেই দুষ্ট তেজবীরকে দূর করে তাড়িয়ে দিল।

 সেখান থেকে তাড়া খেয়ে, তেজবীর ঘুরতে ঘুরতে হী নদীর ধারে গিয়ে উপস্থিত হলেন, সেখান দুটি বুড়োবুড়ি একটি ছোট্ট মেয়েকে নিয়ে বসে কাঁদছিল, তাদের দেখে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তোমরা কাঁদছ কেন? কি হয়েছে?’

 বুড়োটি বলল, ‘বাবা, আমার দুঃখের কথা শুনে কি করবে? আমার আটটি মেয়ে ছিল তার সাতটি অজগরে খেয়েছে, এই একটি আছে। সে বড় ভয়ংকর অজগর, তার আটটি মাথা। বছরে একবার করে আসে, আর আমার একটি মেয়েকে খেয়ে যায়। আবার তার আসবার সময় হয়েছে, এবাবে এটিকেও খাবে। তাই আমরা কাঁদছি।’

 তেজবীর বললেন, ‘এই কথা? আচ্ছা, তোমাদের কোনো চিন্তা নাই। আমি যা বলছি তাই করো। আট জালা খুব কড়ারকমের সাকী (জাপানী মদ) তয়ের করত। করে, ঐ জায়গায় রেখে দাও, তারপর দেখো কি হয়।’

 বুড়ো সেইদিনই আট জালা সাকী তয়ের করে তেজবীরের কথামত সাজিয়ে রেখে দিল, সাকীর গন্ধে চারিদিক ভুর ভুর করতে লাগল। ঠিক সেই সময় অজগর গড়াতে গড়াতে আর ফোঁস ফোঁস করতে করতে এসে উপস্থিত হযেছে, আর, সকলের আগে সেই সাকীর গন্ধ গিয়েছে তার নাকে। আর কি সে বেটা তার লোভ সামলাতে পারে? সে অমনি আট জালায় আট মুখ ঢুকিয়ে দিয়ে সাকী খেতে লাগল। খেতে খেতে তার চোখ বুজে এল, মাথা ঢুলে পড়ল, তবু হুঁশ নাই, সে চোঁ চোঁ করে খাচ্ছে। শেষে ঘুমে অচেতন হয়ে একেবারে মাটিতে গড়াগড়ি খেতে লাগল। তা দেখে তেজবীর বললেন, ‘আর-কি? এই বেলা!’ বলেই তিনি তাঁর তলোয়ার নিয়ে এসে সেটাকে টুকরো টুকরো করে কেটে ফেললেন। তার লেজটা কিন্তু ভারি শক্ত ঠেকল। কিছুতেই কাটা গেল না, বরং তাঁর তলোয়ারই ভেঙে গেল। তখন তেজবীর খুঁজে দেখলেন যে সেই লেজের ভিতরে আশ্চর্যরকমের একখানা তলোয়ার রয়েছে। তিনি তখনি সেই তলোয়ারখানা বার করে নিলেন।

 তখন ত সকলেরই খুব সুখ হল। তারপর বুড়োর মেয়েকে বিয়ে করে, সেই দেশে সুন্দর বাড়ি তয়ের করে, দুজনে সুখে বাস করতে লাগলেন। আর সেই বাড়িতে যার পর নাই আদর যত্নে থেকে বুড়োবুড়িরও শেষকাল খুব আরামেই কাটল।

 গগন-আলোর যে নাতি, তাঁর ছিল তিন ছেলে, দীপ্তানল, ক্ষিপ্তানল আর তৃপ্তানল।

 দীপ্তানল মাছ ধরেন আর তৃপ্তানল শিকার করেন। একদিন তৃপ্তানল দীপ্তানলকে বললেন, ‘দাদা, চলোনা, তোমার কাজটি আমি করি, আর আমার কাজটা তুমি করো দেখি কেমন হয়।’ বলে, নিজের তীরধনুক দাদাকে দিয়ে, দাদার বঁড়শি আর ছিপ তিনি চেয়ে নিলেন।