চারধারে পায়চারি করে বললে, ‘আচ্ছা, খাঁচা আর পথ বুঝতে পেরেছি। এখন কি হয়েছে বলুন।’
ঠাকুরমশাই বললেন, ‘বাঘ খাঁচার ভিতরে ছিল, আর আমি ব্রাহ্মণ পথ দিয়ে যাচ্ছিলুম।’
অমনি শিয়াল তাঁকে থামিয়ে দিয়ে বললে, ‘দাঁড়ান, অত তাড়াতাড়ি করবেন না, আগে ঐটুকু বেশ করে বুঝে নিই। কি বললেন? বাঘ আপনার বামুন ছিল, আর পথটা খাঁচার ভিতর দিয়ে যাচ্ছিল?’
এই কথা শুনে বাঘ হো-হো করে হেসে বললে, ‘দূর গাধা! বাঘ খাঁচার ভিতর ছিল, আর বামুন পথ দিয়ে যাচ্ছিল!’
শিয়াল বললে, ‘রোসো দেখি-বামুন খাঁচার ভিতরে ছিল, আর বাঘ পথ দিয়ে যাচ্ছিল?’
বাঘ বললে, ‘আরে বোকা, তা নয়। বাঘ খাঁচার ভিতরে ছিল, বামুন পথ দিয়ে যাচ্ছিল?’
শিয়াল বললে, ‘এ তো ভারি গোলমালের কথা হল দেখেছি। আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। কি বললে? বাঘ বামুনের ভিতরে ছিল, আর খাঁচা পথ দিয়ে যাচ্ছিল?’
বাঘ বললে, ‘এমন বোকা তো আর কোথাও দেখিনি! আরে বাঘ ছিল খাঁচার ভিতরে, আর বামুন যাচ্ছিল পথ দিয়ে।’
তখন শিয়াল মাথা চুলকাতে-চুলকাতে বললে, ‘না! অত শক্ত কথা আমি বুঝতে পারব না!’
ততক্ষণে বাঘ রেগে গিয়েছে।
সে শিয়ালকে এক ধমক দিয়ে বললে, ‘ও কথা বুঝতেই হবে! দেখ্, আমি এই খাঁচার ভিতরে ছিলুম-দেখ-এই এমনি করে-’
বলতে-বলতে বাঘ খাঁচার ভিতরে গিয়ে ঢুকল, আর শিয়ালও অমনি খাঁচার দরজা বন্ধ করে হুড়কো এঁটে দিল। তারপর শিয়াল ঠাকুরমশাইকে বলল, ‘ঠাকুরমশাই, এখন আমি সব বুঝতে পেরেছি। আমার সাক্ষ্য যদি শুনতে চান, তবে তা হচ্ছে যে, দুষ্ট লোকের উপকার করতে নেই। কাজেই বাঘ মামার জিৎ। এখন আপনি শিগগির যান, এখনো ফলার ফুরোয়নি।’ বলে শিয়াল বনে চরতে গেল, আর ঠাকুরমশাই ফলার খেতে গেলেন।