পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৪২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
গল্পমালা
৪২৯

ভিতরে ও দুটোকে পুড়িয়ে মারুন না।’

 এ কথাটা সকলেরই খুব পছন্দ হল, কিন্তু এর মধ্যে একটু মুশকিল এই দেখা গেল যে, ভূতদের পোড়াতে গেলে রাজবাড়িতেও তখন আগুন ধ’রে যেতে পারে। শেষে অনেক যুক্তির পর এই স্থির হল যে, একটা বাগানবাড়িতে তাদের বাসা দেওয়া হবে; বাগানবাড়ি পুড়ে গেলেও বিশেষ ক্ষতি হবে না। রাজামশাই বললেন, ‘সেই ঢোলকটাকেও তা হলে সেই বাগানবাড়িতে নিয়ে রাখা যাক বাগানবাড়ি পোড়াবার সময় একসঙ্গে সকল আপদ চুকে যাবে।’

 বাগানবাড়ি যাবার কথা শুনে গুপি আর বাঘা খুব খুশি হল। তারা ত জানে না যে এর ভিতর কি ভয়ানক ফন্দি রয়েছে; তারা খালি ভাবল যে বেশ আরামে নিরিবিলি থাকা যাবে, সংগীতচর্চারও সুবিধা হতে পারে। জায়গাটি খুবই নিরিবিলি আর সুন্দর। বাড়িটি কাঠের, কিন্তু দেখতে চমৎকার। সেখানে গিয়ে দেখতে দেখতে বাঘা ভাল হয়ে গেল। তখন গুপি তাকে বলল, ‘ভাই, আর এখানে থেকে কাজ কি? চলো আমরা এখান থেকে চ’লে যাই।’ বাঘা বলল, ‘দাদা, এমন সুন্দর জায়গায় ত আর থাকতে পাব না, দুদিন এখানে রইলাম বা। আহা, আমার ঢোলকটি যদি থাকত!’

 সেদিন বাঘা বাড়ির এঘর-ওঘর ঘুরে বেড়াচ্ছে, গুপি বাগানের এক জায়গায় ব’সে গুনগুন করছে, এমন সময় হঠাৎ বাঘা ভয়ানক চেঁচামেচি ক’রে উঠল। তার সকল কথা বোঝা গেল না, খালি ও গুপিদা! ও গুপিদা!’ ডাকটা খুবই শোনা যেতে লাগল। গুপি তখন ছুটে এসে দেখল যে, বাঘা তার সেই ঢোলকটা মাথায় ক’রে পাগলের মত নাচছে, আর যা-তা আবোল-তাবোল বলতে বলতে ‘গুপিদা গুপিদা’ ব’লে চেঁচাচ্ছে। ঢোলক পেয়ে তার এত আনন্দ হয়েছে যে, সে আর কিছুতেই স্থির হতে পারছে না, গুছিয়ে কথাও বলতে পারছে না। এমনি ক’রে প্রায় আধঘণ্টা চ’লে গেলে পর বাঘা একটু শান্ত হয়ে বলল, ‘গুপিদা, দেখছ কি, এই ঘরে আমার ঢোলকটি—আর কি মজা—হাঃ হাঃ হাঃ’ বলে আবার সে মিনিট দশেক খুব নেচে নিল। তারপর সে বলল, ‘দাদা, এত দুঃখের পর ঢোলকটি পেয়েছি, একটা গান গাও, একটু বাজিয়ে নি।’ গুপি বলল, ‘এখন নয় ভাই, এখন বড্ড খিদে পেয়েছে। খাওয়া দাওয়ার পর রাত্রে বারান্দায় ব’সে দুজনায় খুব ক’রে গানবাজনা করা যাবে।’

 রাজামশাই কিন্তু ঠিক করেছেন, সেই রাত্রেরই তাদের পুড়িয়ে মারবেন। দারোগার উপর হুকুম হয়েছে যে, সেদিন সন্ধ্যার সময় সেই বাগানবাড়িতে মস্ত ভোজের আয়োজন করতে হবে। দারোগামশায় পঞ্চাশ-ষাট জন লোক নিয়ে সেই ভোজে উপস্থিত থাকবেন, খাওয়াদাওয়ার পর গুপি আর বাঘা ঘুমিয়ে পড়লে, তারা সকলে মিলে একসঙ্গে সেই কাঠের বাড়ির চারিদিকে আগুন দিয়ে তাদের পালাবার পথ বন্ধ করবেন।

 সেদিনকার খাওয়া বেশ ভালমতই হল। গুপি আর বাঘা ভাবল যে লোকজন চ’লে গেলেই তারা গান-বাজনা আরম্ভ করবে, দারোগামশাই ভাবলেন যে গুপি আর বাঘা ঘুমোলেই ঘরে আগুন দেবেন। তিনি তাদের ঘুম পাড়াবার জন্য বড়ই ব্যস্ত হয়ে উঠলেন। তাঁর ভাব দেখে যখন স্পষ্টই বোঝা গেল যে, তারা না ঘুমোলে তিনি সেখান থেকে যাবেন না, তখন গুপি বাঘাকে নিয়ে গিয়ে বিছানায় প’ড়ে নাক ডাকাতে লাগল।