পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৪৪৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
গল্পমালা
৪৪৯

পণ্ডিতের কথা

 সেই যে হবুচন্দ্র রাজার গবুচন্দ্র মন্ত্রী ছিল, সেই হবুচন্দ্র রাজার একটা ভারি জবর পণ্ডিতও ছিল। তার এতই বুদ্ধি ছিল যে, তার পেটে অত বুদ্ধি ধরত না;তাই তাকে দিনরাত নাকে কানে তুলোর ঢিপ্‌লী খুঁজে বসে থাকতে হত, নইলে বুদ্ধি বেরিয়ে যেত। তুলোর ঢিপ্‌লী খুঁজতে বলে নাম হয়েছিল ‘ছিল ‘ঢিপাই’ পণ্ডিত।

 একদিন হয়েছে কি, হবুচন্দ্রের দেশের জেলেরা একটা এঁধো পুকুরে জাল ফেলতে গিয়েছে। সেই পুকুরে কোত্থেকে একটা শূয়র এসে ঝাঁঝি পাটার ভিতরে গা ঢাকা দিয়েছিল; জেলেরা জাল ফেলতেই সে গিয়েছে তার মধ্যে আটকে, তারপর জাল টেনে তুলে সেই শুয়র দেখতে পেয়েই ত জেলেরা ভারি আশ্চর্য হয়ে গিয়েছে। তাদের দেশে আর কেউ কখনো এমন জানোয়ার দেখে নি। তারা কিছুতেই ভেবে ঠিক করতে পারল না, এটা কি জানোয়ার। তারা জাল দিয়ে কত বড় বড় শোল, বোয়াল, কচ্ছপ ধরেছে, কিন্তু এমন জানোয়ারের কথা ত কখনো শোনে নি। যা হোক তারা ঠিক করল যে রাজা হবুচন্দ্রের সভায় নিয়ে এটাকে দেখাতে হবে। এই বলে সেই শূয়রটাকে খুব করে জাল দিয়ে জড়িয়ে তারা রাজার সভায় নিয়ে এল। রাজা তার ছটফটি দেখে দেখে আর চ্যাঁচানি শুনে বললেন, ‘বাপ রে। এটা-আবার কি জন্তু?’ সভার লোকেরা কেউ সে কথার উত্তর দিতে পারল না। যে-সব পণ্ডিত সেখানে ছিল তারা দু দল হয়ে গেল। কয়েকজন বললে, ‘গজক্ষয়’, অর্থাৎ, হাতি ছোট হয়ে গিয়ে এমনি হয়েছে। কেউ বলে, মূষা বৃদ্ধি, অর্থাৎ ইদুর বড় হয়ে এমনি হয়েছে। এখন এ কথার বিচার ঢিপাই ছাড়া আর কে করবে? কাজেই রাজা তাকে ডেকে পাঠালেন। ঢিপাই এসে অনেকক্ষণ ধরে সেই শুয়রটাকে দেখে বলল, ‘আরে তোমরা কেউ কিছু বোঝ না। এটাকে নিয়ে জলে ছেড়ে দাও। যদি ডুবে যায়, তবে এটা মাছ, যদি উড়ে পালায় তবে পানকৌড়ি আর যদি সাঁতরে ডাঙ্গায় ওঠে তা হলে কচ্ছপ, না হয় কুমির।’ তখন সভার লোকেরা ভারি খুশি হয়ে বলল, ‘ভাগ্যিস ঢিপাই মশাই ছিলেন, নইলে এমন কথা আর কে বলতে পারত।‘

 আমরা ছেলেবেলায় এই ঢিপাইয়ের গল্প শুনতাম। এইরূপ এক-একটা পণ্ডিত বা পাড়াগেঁয়ে বুদ্ধিমানের গল্প অনেক দেশেই আছে, তার দু-একটি নমুনা শোন।

 ঢিপাইয়ের যে ছেলে, সেও বড় হয়ে তার বাপেরই মতন বড় পণ্ডিত হযেছিল; তার গ্রামের লোকেরা একটা কিছু জানতে হলেই তার কাছে আসত। এর মধ্যে একদিন রাত্রে তাদের গ্রামের ভিতর দিয়ে একটা হাতি গিয়েছে। তখন সকলে ঘুমিয়ে ছিল, কেউ হাতিটাকে দেখতে পায় নি; সকালে উঠে তার পায়ের দাগ দেখে তাদের ভারি ভাবনা হল। না জানি এসব কিসের দাগ, আর না জানি তাতে কি হবে। তারা এর কিছুই বুঝতে না পেরে শেষে ঢিপাইয়ের ছেলেকে নিয়ে এল। সে এসে অনেক ভেবে বলল, ‘ওহ্! বুঝেছি রাত্রে চোর এসে উঘ্‌লি নিয়ে গেছে। সে বেটা বারবার বসেছিল, তাইতে উঘ্‌লির তলায় দাগ পড়েছে।’

 কাশীর ওদিকে এমনি একটা পণ্ডিতের গল্প আছে সেই পণ্ডিতের নাম ছিল ‘লাল