দেবে বলেছে।
তারপর একদিন বাঘ বললে, ‘কই, লেবু তো ফুরিয়ে গেল, মেয়ে তো বিয়ে দিলে না!’
কাক বললে, ‘দেবে বইকি! আপনি যখন চাইবেন, তক্ষুণি দেবে।’
বাঘ বললে, ‘তবে তাদের বল গিয়ে যে, যদি কাল রাত্রে মেয়ের বিয়ে না দেয়, তাহলে তাদের সবাইকে চিবিয়ে খাব।’
কাক তো ভাই চায়। সে তক্ষুণি ব্রাহ্মণের বাড়ি গিয়ে বরলে, ‘ওগো শুনছ। কাল রাত্রে বাঘ আসবে, তোমাদের মেয়ে বিয়ে করতে। যদি বিয়ে না দাও, সকলকে চিবিয়ে খাবে।’
একথা শুনেই তো ব্রাহ্মণ আর ব্রাহ্মণী বুক চাপড়ে চেঁচিয়ে কাঁদতে লাগলেন।
কান্না শুনে গ্রামের লোক ছুটে এসে বললে, ‘কি হয়েছে?’
ব্রাহ্মণ কাঁদতে-কাঁদতে বললেন, ‘কাল বাঘ আসবে, আমাদের মেয়েকে বিয়ে করতে। বিয়ে না দিলে সকলকে চিবিয়ে খাবে।’
শুনে গ্রামের লোক বললে, ‘এই কথা! আচ্ছা, দেখা যাবে বেটা কেমন বিয়ে করে, আর না দিলে চিবিয়ে খায়! আপনার কোনো ভয় নেই, আমরা সব ঠিক করে দিচ্ছি।’ বলে তারা বাঘের কাছে খবর পাঠিয়ে দিলে, ‘বাঘমশাই, আপনার মতন এমন ভালো বর কি আর হবে! আপনি পোশাক পরে আসবেন, সভার মাঝে বসবেন, গান বাজনা শুনবেন, নিমন্ত্রণ খাবেন, তারপর বেশ ভালো মতো করে বিয়ে করে চলে যাবেন।’
তারপর তারা সকলে মিলে ব্রাহ্মণের উঠানে তিনশো উনুন কেটে তাতে তিনশো হাঁড়ি তেল চড়াল। কুয়োর উপর চমৎকার বিছানা করে রাখল। তারপর ঢাক ঢোল বাজিয়ে খুব সোরগোল করতে লাগল।
বাঘ সেই গোলমাল শুনে বললে, ‘ঐ রে আমার বিয়ের ধুম লেগেছে।’ তখন সে তাড়াতাড়ি জামা-জোড় পরে, পাগড়ি এঁটে, নাচতে-নাচতে এসে ব্রাহ্মণের বাড়ি উপস্থিত হল।
অমনি সকলে, ‘আরে, বর এসেছে! বাজা, বাজা!’ বলে বাঘমশাইকে সেই কুয়োর উপরকার বিছানা দেখিয়ে দিলে। বাঘমশাই তো তাতে লাফিয়ে বসতে গিয়েই ‘ঘেঁয়াও!’ করে বিছানাযুদ্ধ কুয়োর পড়েছেন, আর তার সঙ্গে-সঙ্গে গ্রামের সকলে মিলে সেই তিনশো হাঁড়ির গরম তেল, আর তিনশো উনুনের আগুন কুয়োয় এনে চলেছে।
তারপর দেখতে-দেখতে বোকা বাঘ পুড়ে ছাই হল, ব্রাহ্মণেরও আপদ কেটে গেল।