তা শুনে একজন বললে, ‘ঘোড়ার ডিম হবে!’
ঘোড়ার কিনা ডিম হয় না, তাই ‘ঘোড়ার ডিম হবে’ বললে বুঝতে হয় যে, ‘কিচ্ছু হবে না,’ কিন্ত জোলা সে কথা জানত না। সে ঘোড়ার ডিমের নাম শুনেই ব্যস্ত হয়ে বললে, ‘ভাই, ঘোড়ার ডিম কোথায় পাওয়া যায় বলতে পার?’
সেখানে একটা ভারি দুষ্টু লোক ছিল। সে জোলাকে বললে, ‘আমার সঙ্গে এস, আমার ঘরে ঘোড়ার ডিম আছে।’
সে দুষ্টু লোকটার ঘরে ছিল একটা ফুটি। সে জোলাকে তার সঙ্গে বাড়ি নিয়ে, সেই ফুটিটা তার হাতে দিয়ে বললে, ‘এই নাও ঘোড়ার ডিম। দেখ, কেমন ফেটে রয়েছে। এখুনি এর ভিতর থেকে ছানা বেরুবে। দেখো ছুটে পালায় না যেন!’
তখন জোলার আনন্দ দেখে কে!
সে জিজ্ঞেস করলে, ‘এর দাম কত?’ দুষ্টু লোকটা বললে, ‘পাঁচ টাকা।’ জোলা তখুনি সেই পাঁচটা টাকা খুলে দিয়ে ফুটি নিয়ে ঘরে চললে। ফুটি ফেটে রয়েছে, তার ভিতর লাল দেখা যাচ্ছে। জোলা ভাবলে, ‘ঐ রে, ছানা যদি বেরিয়ে পালাতে চায়, তখুনি খপ করে ধরে ফেলব। তারপর গলায় চাঁদর বেঁধে তাকে বাড়ি নিয়ে যাব। যদি লাফায়, তবু ছাড়ব না।’
এমনি নানা কথা ভাবতে-ভাবতে জোলা একটা নদীর ধারে এসে উপস্থিত হল, আর ঠিক তখুনি তার ভয়ানক জল তেষ্টা পেল। জোলা ডাঙ্গার উপর ফুটিটা রেকে জল খেতে গিয়েছে, তার মধ্যে যে কোথা থেকে এক শিয়াল সেখানে এসেছে, তা সে দেখতে পায়নি। তার জল খাওয়া হতে-হতে, শিয়াল ফুটি প্রায় শেষ করে এনেছে। এমন সময় জোলা তাকে দেখতে পেয়ে, ‘হায় সর্বনাশ! আমার ঘোড়ার ছানা পালাল।’ বলে তাড়া করলে!
শিয়ালকে ছুটে ধরা কি জোলার কাজ। শিয়াল তাকে মাঠের উপর দিয়ে, বনের ভিতর দিয়ে, কোথায় নিয়ে গেল তার ঠিকানা নেই। শেষে জোলা আর চলতে পারে না। তখন ঘরে ফিরতে গিয়ে দেখে, পথ হারিয়ে গেছে।
তখন রাত হয়েছে, কাজেই আর ঘরে ফিরবার জো ছিল না। জোলা অনেক খুঁজে এক বুড়ির বাড়িতে গিয়ে, একটু শোবার জায়গা চেয়ে নিল। বুড়ির দুটি বই ঘর ছিল না। তার একটিতে বুড়ি আর তার নাতনী থাকত। আর একটিতে জিনিসপত্র ছিল, সেইটিতে সে জোলাকে জায়গা দিলে।
একটা বাঘ রোজ রাত্রে বুড়ির ঘরের পিছনে এসে বসে থাকত। বুড়ি তা টের পেয়ে,