পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৪৭৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মহাভারতের কথা
৪৭৭

 এ কথায় গণেশ বলিলেন, “মুনিবর, আমি আপনার লেখক হইতে প্রস্তুত আছি। কিন্তু দেখিবেন, লিখিতে লিখিতে যেন আমাকে কলম হাতে করিয়া বসিয়া থাকিতে না হয়;আমি খুবই তাড়াতাড়ি লিখিতে পারি।”

 তাহা শুনিয়া ব্যাস বলিলেন, “অতি উত্তম কথা। আমি যথাসাধ্য তাড়াতাড়িই বলিতে চেষ্টা করিব। কিন্তু দেখিবেন, যেন তাড়াতাড়ি লিখিতে গিয়া আপনি যাহা-তাহা লিখিয়া না বসেন। আমি যাহা বলিব, তাহার অর্থ বুঝিয়া তবে লিখিবেন, না বুঝিয়া লিখিতে পারিবেন না।”

 গণেশ বলিলেন, “আচ্ছা, তাহাই হইবে।”

 এইরূপ নিয়ম করিয়া ত লেখা আরম্ভ হইল। ব্যাস বড়ই বুদ্ধিমান্ লোক, তাই তিনি বলিয়াছেন, “অর্থ বুঝিয়া তবে লিখিতে হইবে।” সোজাসুজি লিখিয়া যাওয়ার কথা হইলে, আর তিনি গণেশের সঙ্গে পারিয়া উঠিতেন না! গণেশের মত লেখক ত্রিভুবনে নাই;তাঁহার কলমের কাছে ঝড় হার মানিয়া যায়, কবিতা রচনা করিয়া তাঁহার সঙ্গে সঙ্গে চলিবার শক্তি ব্যাসেরও ছিল কি না সন্দেহ। কিন্তু ব্যাস অতি চমৎকার উপায়ে গণেশকে জব্দ করিলেন। এক একটি শ্লোক তিনি এমনি কঠিন করিয়া দিতে লাগিলেন যে, তাহার অর্থ বুঝিতে গণেশ যে সর্বজ্ঞ, তাঁহাকেও ভ্রূকুটি করিয়া ভাবনায় পড়িতে হয়। গণেশ যতক্ষণ ভাবেন, ততক্ষণে ব্যাস বিস্তর শ্লোক রচনা করিয়া ফেলেন। কাজেই গণেশের আর কলম থামাইবার আবশ্যকই হইল না।

 এই কাব্য প্রস্তুত করিয়া ব্যাসদেব সকলের আগে তাহা নিজের পুত্র শুকদেবকে শিখাইলেন। তারপর তাঁহার শিষ্যেরা তাহা শিক্ষা করেন। দেবলোকে নারদ, পিতৃলোকে অসিত দেবল, গন্ধর্ব যক্ষ ও রাক্ষসদিগের নিকট শুকদেব ও মনুষ্যলোকে বৈশম্পায়ন ইহার প্রচার করেন। দেবতারা এই পুস্তক আর চারিবেদ ওজন করিয়া দেখিয়াছিলেন যে, চারিখানি বেদ অপেক্ষা ব্যাসের এই কাব্যই অধিক ভারি। এইজন্য এই কাব্যের নাম মহাভারত” রাখা হইয়াছে।


সৃষ্টি ও প্রলয়ের কথা

 মহাভারতে লেখা আছে যে, সৃষ্টির পূর্বে কেবলই অন্ধকার ছিল। তারপর প্রথমে একটি ডিম হইল। ব্রহ্মাণ্ডের সকল বস্তুর বীজ এই ডিমের ভিতরে ছিল।

 ডিমটি যখন ফুটিল, তখন তাহার ভিতর হইতে সকলের আগে ব্রহ্মা বাহির হইলেন, তারপর ক্রমে দেব, দানব, যক্ষ, পিশাচ, পৃথিবী, জল, বায়ু, আকাশ প্রভৃতির সৃষ্টি হইল।

 ব্রহ্মার অনেক পুত্র, তাহার মধ্যে মরীচি, অত্রি, অঙ্গিরাঃ, পুলস্ত্য, পুলহ, ক্রতু এবং বশিষ্ঠ, এই সাতজনকে সপ্তর্ষি বলে। ব্রহ্মার বুক হইতে ধর্ম ও ভৃগু, এবং তাঁহার পায়ের বুড়া আঙ্গুল হইতে দক্ষের জন্ম হয়। দক্ষের পঞ্চাশটি কন্যা ছিল, মরীচির পুত্র কশ্যপ এই পঞ্চাশটির মধ্যে তেরটিকে বিবাহ করেন। সেই তেরটি কন্যার নাম—অদিতি, দিতি, দনু, কালা, দনায়ু, সিংহিকা, ক্রোধা, প্রধা, বিশ্বা, বিনতা, কপিলা, মুনি ও কদ্রু। ইঁহারাই দেব, দৈত্য, গন্ধর্ব, অপ্সরা, প্রভৃতির মাতা।