রাত্রে কখনো ঘরের বাইরে আসত না, তার নাতনীকেও আসতে দিত না। কিন্ত নাতনীটি জোলার কাছে তার ঘোড়ার ডিমের কথা একটু শুনতে পেয়েছিল, তার কথা ভালো করে শুনবার জন্য সে আবার তার কাছে যেতে চাইল। তখন বুড়ি তাকে বললে, ‘না-না, যাস্ নে! বাঘে-টাগে ধরে নেবে!’
‘বাঘে-টাগে’ এমনি করে লোকে বলে থাকে। টাগ বলে কোন জন্তু নেই। কিন্ত বাঘ তো আর সে কথা জানে না, সে ঘরের পিছনে বসে টাগের কথা শুনে ভারি ভাবনায় পড়ে গেছে। সে ঠিকা বুঝে নিয়েছে যে, টাগ তার নিজের চেয়েও ঢের ভয়ানক একটা জানোয়ার বা রাক্ষস বা ভূত হবে। আর তখন থেকে তার বেজায় ভয় হয়েছে, আর সে ভাবছে, টাগ যদি আসে, কোনখান দিয়ে সে পালাবে।
এমন সময় সেই জোলা ভোর হয়েছে কি না দেখবার জন্য বাইরে এসেছে। এসেই সে বাঘকে দেখতে পেয়ে মনে করলে ‘ঐ রে! আমার ঘোড়ার ছানা বসে আছে!’
অমনি সে ছুটে গিয়ে, বাঘের নাকে মুখে গলায় কাপড় জড়িয়ে তড়াক করে তার পিঠে উঠে বসল!
বাঘ যে তখন কি ভয়ানক চমকে গেল কি বলব! সে ভাবল, ‘হায়-হায়! সর্বনাশ হয়েছে! নিশ্চয় আমাকে টাগে ধরেছে! এই মনে করে বাঘ প্রাণের ভয়ে ছুটতে লাগল। কিন্ত চোখে কাপড় বাঁধা ছিল বলে ভালো করে ছুটতে পারল না।
জোলা তো গোড়া থেকেই তার পিঠে চড়ে বসে আছে, আর ভাবছে এটা তার ঘোড়ার ছানা! সে ঠিক করে রেখেছে যে একটু ফরসা হলেই পথ চিনতে পারবে, ঘোড়ার ছানাটিকে নিয়ে বাড়ি যাবে। ফরসা যখন হল তখন জোলা দেখলে যে, কাজ তো হয়েছে! সে ঘোড়া মনে করে বাঘের উপর চড়ে বসেছে! তখন আর সে কি করে? সে ভাবলে যে এবার আর রক্ষা নেই!
বাঘ ছুটছে আর বলছে, ‘দোহাই টাগদাদা! আমার ঘাড় থেকে নামো, আমি তোমায় পূজো করব।’ জোলা জানে না যে বাঘ তাকেই টাগ বলছে! জোলা খালি ভাবছে, সে কি করে পালাবে।
এমন সময় একটা বটগাছের তলা দিয়ে যাচ্ছিল। সেই গাছের ডালগুলি খুব নীচু, হাত বাড়ালেই ধরা যায়! জোলা খপ করে তার একটা ডাল ধরে ঝুলে গাছে উঠে পড়ল।
তখন জোলাও বললে, ‘বড্ড বেঁচে গিয়েছি!’
বাঘও বললে, ‘বড্ড বেঁচে গিয়েছি!’