পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৪৮০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৮০
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

নারায়ণ মার্কণ্ডেয়কে বলিলেন, “ব্রহ্মা এখন ঘুমাইতেছেন। তাঁহার ঘুম ভাঙিলে আবার নূতন সৃষ্টি করা যাইবে, ততক্ষণ তুমি এইখানে বিশ্রাম কর।”

 এই বলিয়া নারায়ণ অন্তর্হিত হইলেন (আকাশে মিলাইয়া গেলেন)। তারপর আবার নূতন সৃষ্টি ও প্রলয়ের কথা মহাভারতে এইরূপ লেখা আছে।


বৈবস্বত মনু ও আশ্চর্য মাছের কথা

 সত্যযুগে এক মুনি ছিলেন, তাঁহার নাম ছিল মনু। তাঁহার পিতার নাম ছিল বিবস্বান্, তাই লোকে তাঁহাকে বলিত, বৈবস্বত (বিবস্বানের পুত্র) মনু।

 তখন পৃথিবীতে কত সুন্দর মানুষ ছিল, কিন্তু বৈবস্বত মনুর মত সুন্দর কেহই ছিল না। কত বড় বড় মুনি ছিলেন, কিন্তু বৈবস্বত মনুর চেয়ে বড় মুনি কেহই ছিলেন না।

 চারিণী নদীতে বৈবস্বত মনু স্নান করিলেন। তাঁহার মাথার জটা, পরনের কাপড় ভিজাই রহিল। তাহা লইয়াই মুনি তপস্যা করিতে বসিলেন। তাঁহার মতন তপস্যা কেহই করিতে পারিত না।

 নদীতে একটি ছোট্ট মাছের ছানা ছিল। সে বেচারা কতই ছোট, তাহাকে ভাল করিয়া দেখিতেই পাওয়া যায় না।

 মহামুনি তপস্যায় বসিয়াছেন, ছোট্ট মাছের ছানাটি তাঁহার নিকট আসিয়া, তাহার ছোট্ট ডানা দুখানি জোড় করিয়া বলিল—

 “মুনি ঠাকুর! আমাকে দয়া করুন। দেখুন, আমি কতই ছোট— বড় মাছেরা আমাকে খাইয়া ফেলিবে।”

 মুনি চাহিয়া দেখিলেন, একটি ছোট মাছের ছানা তাঁহার নিকট হাত জোড় করিতেছে। মুনির দয়া হইল, তিনি বলিলেন—“বাছা, তোর কি চাই? বল আমি কি করিলে তোর দুঃখ দূর হইবে।”

 ছোট মাছের ছানাটি তাহার ছোট্ট ডানা দুখানি জোড় করিয়া বলিল— “আমাকে এখান হইতে লইয়া যাউন। আমাকে দিয়া আপনার উপকার হইবে।”

 দুহাতে অঞ্জলি করিয়া, মহামুনি ছোট্ট মাছের ছানাটিকে তুলিয়া লইলেন। এরপর তাহাকে বাড়িতে আনিয়া, ধবধবে সাদা কলসীর ভিতরে রাখিয়া, পরম যত্নে পুষিতে লাগিলেন।

 যতদিন যাইতে লাগিল, মাছের ছানাটি ততই বাড়িতে লাগিল। শেষে আর সেই কলসীতে তাহার জায়গা হয় না। তখন সে মুনিকে বলিল—“মুনি ঠাকুর, এখানে ত আমি নড়িতে চড়িতে পাই না। দয়া করিয়া আমাকে অন্য জায়গায় লইয়া যাউন!”

 সেইখানে একটা খুব বড় দীঘি ছিল, তাহার এপার হইতে ওপার ধোঁয়ার মত দেখা যাইত। মুনি মাছের ছানাটিকে কলসী হইতে তুলিয়া, সেই দীঘিতে নিয়া রাখিলেন।

 তারপর অনেক বৎসর গেল। অনেক বৎসর ধরিয়া সেই দীঘিতে থাকিয়া, মাছটি ক্রমে বড় হইতে লাগিল। শেষে আর সেই বিশাল দীঘিতেও তাহার জায়গা হয় না! তখন সে অনেক মিনতি করিয়া মুনিকে আবার বলিল— “মুনি ঠাকুর, আপনার দয়ায়, দেখুন, আমি কত বড় হইয়াছি! এখন আর এই দীঘিতেও আমার জায়গা হয় না। আপনার দুটি পায়ে