কচের কথা
এই ভাবিয়া তাঁহারা বৃহস্পতির জ্যেষ্ঠ পুত্র কচের নিকটে গিয়া বলিলেন, “কচ, আমরা দুঃখে পড়িয়া তোমার নিকট আসিয়াছি, তোমাকে আমাদের একটু উপকার করিতে হইবে।”
কচ দেবতাদিগকে নমস্কার পূর্বক, বিনয়ের সহিত বলিলেন, “আমার সাধ্য হইলে, আমি তাহা অবশ্য করিব। বলুন, আমাকে কি করিতে হইবে?”
দেবতারা বলিলেন, “ভৃগুর পুত্র শুক্র সঞ্জীবনী বিদ্যা জানেন, তাঁহার নিকট হইতে সেই বিদ্যা তোমাকে শিখিয়া আসিতে হইবে।”
কচ বলিলেন, “আমি এখনই তাঁহার নিকট যাইতেছি।”
দানবদিগের রাজা বৃষপর্বার বাড়িতে শুক্রাচার্য বাস করিতেন, কচ দেবতাদিগের নিকট বিদায় হইয়া সেইখানে গিয়া উপস্থিত হইলেন।
শুক্র তখন বৃষপর্বার নিকটেই বসিয়াছিলেন, কচ তাঁহাকে প্রণাম করিয়া বলিলেন, “মহাশয়, আমি অঙ্গিরার পৌত্র, বৃহস্পতির পুত্র, আমার নাম কচ, আপনার শিষ্য হইতে আসিয়াছি। আপনি কৃপাপূর্বক অনুমতি করিলে, এক হাজার বৎসর আপনার সেবায় থাকিয়া, ব্রহ্মচর্য (অর্থাৎ ছাত্রাদিগের ধর্ম পালন) করিব।”
অঙ্গিরাও ব্রহ্মার পুত্র, ভৃগুও ব্রহ্মার পুত্র কাজেই সম্পর্ক হিসাবে কচ শুক্রের ভাইপো। সুতরাং শুক্র তাঁহার কথায় সন্তুষ্ট হইয়া বলিলেন, “বৎস, তোমার পিতা আমার মান্য লোক। আমি আহ্লাদের সহিত তোমাকে শিষ্য করিলাম।”
এইরূপে কচ শুক্রের শিষ্য হইয়া, পরম সুখে তাঁহার আশ্রয়ে বাস করিতে লাগিলেন। শুক্র তাঁহাকে যথেষ্ট স্নেহ করিতেন, আর তাঁহার কন্যা দেবযানীর ত কচ না হইলে কাজই চলিত না। দেবযানীকে ফুল আনিয়া দেওয়া, তাঁহার কাজের সাহায্য করা, তাঁহার সঙ্গে গান গাওয়া, নানারকম নৃত্য করিয়া তাঁহাকে সন্তুষ্ট করা—অবসর কালে, এই-সকলই কচের প্রধান কাজ ছিল। এইরূপে পাঁচশত বৎসর পরম সুখে কাটিয়া গেল।
এদিকে কচ শুক্রের শিষ্য হওয়াতে অসুরদের আর অসন্তোষের সীমা রহিল না। তাহাদের মনে বড়ই সন্দেহ হইল যে, এই ছোকরা সঞ্জীবনী বিদ্যা চুরি করিয়া নিতে আসিয়াছে। সুতরাং তাহারা স্থির করিল যে, যেমন করিয়াই হউক, ইহাকে মারিয়া ফেলিতে হইবে।
একদিন কচ শুক্রের গরু লইয়া বনে গিয়াছেন, এমন সময় অসুরেরা তাঁহাকে খণ্ড খণ্ড করিয়া শিয়াল কুকুর দিয়া খাওয়াইয়া ফেলিল। সন্ধ্যার সময় গরুগুলি ঘরে ফিরিল, কিন্তু কচ তাহাদের সঙ্গে আসিলেন না। তাহা দেখিয়া দেবযানী তাঁহার পিতাকে বলিলেন, “বাবা, সন্ধ্যা হইল আপনার অগ্নিহোত্রে আহুতি দেওয়া হইল, গরুগুলি আপনা আপনি ঘরে ফিরিল, কিন্তু কচ ত আসিল না! সে বুঝি তবে আর বাঁচিয়া নাই! আমি সত্য বলিতেছি, কচ বিনা আমিও বাঁচিয়া থাকিতে পারিব না।”
দেবযানীর দুঃখ দেখিয়া শুক্র বলিলেন, “ভয় কি মা! কচ এখনই আসিবে, আমি তাহাকে বাঁচাইয়া দিতেছি।”
এই বলিয়া তিনি সঞ্জীবনী মন্ত্র পড়িতে পড়িতে কচকে ডাকিতে লাগিলেন আর অমনি