পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৪৯২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।



৪৯২
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

আকাশ ছাইয়া গেল। দানবদিগের কাঁচা সোনার রঙের মাথাগুলি এমাগত কাটিয়া পড়িতে লাগিল। এবারে দেবতারা অমৃত খাইয়া অমর হইয়াছেন, সুতরাং দানবেরা আর তাঁহাদিগকে মারিতে পারিল না। উহারা পাহাড় পর্বত এবং অস্ত্রশস্ত্র লইয়া ভয়ানক যুদ্ধ করিয়াছিল। কিন্তু নারায়ণের সুদর্শন চক্র এবং দেবতাদের বাণের সম্মুখে তাহারা টিকিয়া থাকিতে পারিল না। কাজেই শেষে তাহদের কেহ মাটির নীচে, কেহ বা সমুদ্রের ভিতরে পলায়ন করিয়া প্রাণরক্ষা করিল।

 যুদ্ধে জয়লাভ করিয়া দেবতাগণের আনন্দের সীমা রহিল না। তখন তাঁহারা মন্দর পর্বতকে যত্নের সহিত তাহার স্থানে রাখিয়া, এবং অবশিষ্ট অমৃত নারায়ণের হাতে দিয়া নিজ নিজ গৃহে প্রস্থান করিলেন।


বৃত্রের কথা

 অমর হইয়াও দেবতারা দৈত্যদিগকে সহজে আঁটিতে পারেন নাই। ইহার পরেও তাঁহারা দৈত্যদিগকে দেখিলেই উর্দ্ধশ্বাসে পলায়ন করিতেন, আর, যুদ্ধে ক্রমাগতই তাহাদের নিকট হারিয়া যাইতেন। কালেয় (অর্থাৎ কালের পুত্র) নামক একদল দৈত্য তাঁহাদিগকে এমনি ব্যতিব্যস্ত করিয়াছিল যে, কি বলিব। ইহাদের দলপতি বৃত্রের নাম শুনিলেই তাঁহারা ভয়ে কাঁপিতেন।

 শেষে আর উপায় না দেখিয়া, তাঁহারা সকলে মিলিয়া ব্রহ্মার স্তব করিতে লাগিলেন। তখন ব্রহ্মা বলিলেন—


দধীচের কথা

 “আমি তোমাদিগকে বৃত্রাসুর বধ করিবার উপায় বলিয়া দিতেছি। দধীচ নামে এক অতি প্রসিদ্ধ এবং মহাশয় মুনি আছেন; তোমরা সকলে গিয়া তাঁহার নিকট বর প্রার্থনা কর। তোমরা চাহিবামাত্র তিনি সস্তুষ্ট হইয়া বর দিতে প্রস্তুত হইবেন। তখন তোমরা বলিবে, “আপনি জগতের উপকারের জন্য আপনার হাড় ক'খানি দিন।” “জগতের উপকারের জন্য সেই মহামুনি তখনই আনন্দের সহিত দেহত্যাগ করিবেন। তারপর তাহার হাড় ক'খানি আনিয়া তাহা দ্বারা বজ্র নামক এক ভয়ঙ্কর অস্ত্র প্রস্তুত করাইতে হইবে। সে অস্ত্রের ছয়টি কোণ, আর তাহার গর্জন অতি ভীষণ। সেই বজ্র দিয়া বৃত্রকে বধ করিতে, ইন্দ্রের কিছুমাত্র কষ্ট হইবে না।”

 এই কথা শুনিবামাত্র, দেবতাগণ সরস্বতী নদীর তীরে, দধীচ মুনির আশ্রমে গিয়া উপস্থিত হইলেন। তাঁহারা সেই মহাপুরুষকে প্রণাম করিয়া বর প্রার্থনা করিলে, তিনি আহ্লাদের সহিত বলিলেন—

 “আমি আপনাদিগকে শুধু হাতে ফিরিতে দিব না। এই আমি দেহত্যাগ করিতেছি।” বলিতে বলিতেই তাঁহার আত্মা দেহ ছাড়িয়া চলিয়া গেল। তারপর দেবতারা তাঁহার হাড়