পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৪৯৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৯৮
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

ব্যতিব্যস্ত করিয়া তুলিবে, ইহা আশ্চর্য নহে। দানবের তাড়ায় তাঁহারা পথহারা শিশুর ন্যায় অস্থির হইয়া উঠিলেন।

 মাঝে ইন্দ্রের উৎসাহে, তাঁহারা একটু স্থির হইয়াছিলেন। কিন্তু তাহার পরই যখন মহিষাসুর নামক একটা অতি ভীষণ দৈত্য বিশাল পর্বত হাতে তাঁহাদেব উপর আসিয়া পড়িল, তখন আর তাঁহারা পলাইবার পথ খুঁজিয়া পান না। এবারে ইন্দ্রের আর দেবতাগণকে উৎসাহ দেওয়ার কথা মনে ছিল না। সুতবাং তাঁহাদের সঙ্গে জুটিয়া তিনিও পলায়ন করিলেন।

 সেখানে মহাদেব ছিলেন, তিনি অবশ্য পলায়ন করেন নাই। সামান্য একটা অসুর দেখিয়া ব্যস্ত হওয়ার অভ্যাস তাঁহার ছিল না; তিনি পলায়নও করিলেন না, যুদ্ধও করিলেন না, খালি চাহিয়া দেখিতে লাগিলেন অসুরেরা কি করে।

 মহিষাসুর ছুটিয়া আসিয়া মহাদেবের রথের ধূব (অর্থাৎ যাহাকে গাড়োয়ানেরা 'বাম' বলে) কাড়িয়া লইল। মহাদেবের তথাপি গ্রাহ্য নাই। তিনি মনে ভাবিতেছেন যে ‘আমি আর এটাকে কিছু বলিব না এখনই স্কন্দ আসিয়া ইহার ব্যবস্থা করিবে।’

 এমন সময় লাল কাপড় এবং লাল মালা পরিয়া সোনার বর্ম গায় সোনার রথে চড়িয়া স্কন্দ সূর্যের ন্যায় তেজের সহিত রণস্থলে আসিয়া উপস্থিত হইলেন। তারপর একটা জ্বলন্ত শক্তি হাতে লইয়া তিনি তাহা মহিষাসুরকে ছুঁড়িয়া মারিতেই দুষ্ট দানবের মাথা কাটিয়া পড়িল। সে মাথা পড়িল গিয়া উত্তর কুরু নামক দেশে। উত্তর কুরুর সিংহ দরজা ষোল যোজন চওড়া ছিল। মহিষাসুরের প্রকাণ্ড মাথা পড়িয়া সেই ষোল যোজন চওড়া বিশাল দরজা বন্ধ হইয়া গেল। তাহার ভিতর দিয়া যে লোক যাওয়া আসা করিবে, তাহার উপায় রহিল না।

 তারপর অবশিষ্ট দানবদিগকে বধ করিতে স্কন্দের অতি অল্প সময়ই লাগিয়াছিল।

 এইরূপে সৃষ্টির প্রথম হইতেই দেবতা আর অসুরের বিবাদ চলিয়া আসিতেছিল। সে বিবাদ কত দিনে থামিয়াছিল সে বিষযে, কোন কথা শুনিতে পাওয়া যায় না। দ্বাপর যুগেও যে সে বিবাদ খুব ভাল করিয়াই চলিয়াছিল, মহাভারতে এ কথা স্পষ্ট লেখা আছে নিবাতকবচ নামক একদল দৈত্য সমুদ্রের ভিতরে দুর্গ প্রস্তুত করিয়া ইন্দ্রকে বড়ই জ্বালাতন করিতে আরম্ভ করে। অর্জুন যখন অস্ত্র আনিবার জন্য স্বর্গে গিয়াছিলেন, তখন এই সকল দৈত্যের সহিত তাঁহার যুদ্ধ করিতে হয়। যুদ্ধে অর্জুনেরই জয় হইয়াছিল, কিন্তু তিনিও দৈত্যদিগকে মারিয়া শেষ করিতে পারিয়াছিলেন কি না, সে বিষয়ে সন্দেহ আছে। কারণ, দেখা যায় যে, ইহার অতি অল্প দিন পরেই দুর্যোধনের সঙ্গে দৈত্যদিগের খুব বন্ধুতা হইয়াছিল। পাণ্ডবদিগের দয়ায় চিত্রসেন নামক গন্ধর্বের হাত হইতে রক্ষা পাইয়া দুর্যোধন যখন প্রাণত্যাগ করিতে চাহিয়াছিলেন, তখন দৈত্যবা তাঁহাকে শান্ত করিবার জন্য অনেক চেষ্টা করে।


কদ্রু ও বিনতার কথা

 কদ্রু আর বিনতা দক্ষের কন্যা। মরীচির পুত্র কশ্যপের সহিত ইঁহাদিগের বিবাহ হইয়াছিল। একদিন কশ্যপ ইঁহাদের উপর সন্তুষ্ট হইয়া বলিলেন—

 “আমি তোমাদিগকে বর দিব, তোমরা কি বর চাহ?”