পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৫০৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মহাভারতের কথা
৫০৭

 গরুড় বলিল, “তথাস্তু। (তাই হোক)”

 এই বলিয়া সে সবেমাত্র অমৃত লইয়া ছুটিয়া চলিয়াছে, এমন সময় ইন্দ্র তাহাকে বধ করিবার জন্য বজ্র ছুঁড়িয়া মারিলেন। কিন্তু তাহাতে তাহার কিছুই হইল না। তখন সে মনে ভাবিল যে “এত বড় একটা অস্ত্র, এতবড় মুনির হাড় দিয়া তাহা প্রস্তুত হইয়াছে, আর জগতে তাহার এত বড় নাম। এমন একটা অস্ত্র বৃথা হইলে ত বড় লজ্জার কথা হয়। সুতরাং ইহার জন্য আমার কিছু ক্ষতি হওয়া উচিত হইতেছে।”

 এই ভাবিয়া সে তাহার শরীর হইতে একখানি পালক ফেলিয়া দিয়া, ইন্দ্রকে বলিল, “এই নিন। আপনার অস্ত্রের মান রাখিয়া গেলাম।”

 ইন্দ্র ত তাহা দেখিয়া একেবাবে অবাক। তিনি তখন গরুড়ের সহিত বন্ধুতা করিবার জন্য ব্যস্ত হইলেন। তাহা দেখিয়া গরুড়ও তাঁহার উপর খুব সস্তুষ্ট হইল।

 তখন ইন্দ্র বলিলেন, “ভাই অমৃত যাহারা খাইবে তাহারাই অমর হইয়া আমাদের উপর অত্যাচার করিবে। তোমার যদি উহাতে প্রয়োজন না থাকে তবে উহা আমাকে দিয়া যাও।”

 গরুড় বলিল, “আমার বিশেষ প্রযোজন আছে, সুতরাং ইহা আমি কিছুতেই দিতে পারিতেছি না। কিন্তু আমি যেখানে ইহা রাখিব সেখান হইতে তখনই আপনি ইহা লইয়া আসিতে পারিবেন।”

 ইহাতে ইন্দ্র যার পর নাই সন্তুষ্ট হইয়া গরুড়কে বর দিতে চাহিলে সে বলিল, “সর্পগণ আমার মাতকে বড়ই কষ্ট দিয়াছে, সুতরাং আমাকে এই বর দিন যে সাপেরা আমার খাদ্য হইবে, তাহাদের বিষে আমার কিছুই হইবে না।”

 ইন্দ্র বললেন, “আচ্ছা তাহাই হইবে। এখন তুমি অমৃত লইয়া যাও। তুমি উহা রাখিয়া দিবা মাত্র আমি তাহা লইয়া আসিব।”

 এই বলিয়া ইন্দ্র গরুড়কে বিদায় দিলে সে অমৃতসহ তৎক্ষণাৎ সর্পগণের নিকট উপস্থিত হইয়া বলিল—

 “এই দেখ আমি অমৃত আনিয়াছি আমি উহা কুশের (সেই যাহাতে কুশাসন হয়) উপর রাখিয়া দিলাম, তোমরা মনে করিয়া আহ্নিক সারিয়া আসিয়া উহা আহার কর।”

 তারপর সে বলিল, “তোমরা যাহা বলিয়াছিলে, আমি তাহা করিয়াছি সুতরাং এখন হইতে আর আমার মা তোমাদের দাসী থাকিলেন না।”

 নাগগণ ইহাতে সম্মত হইয়া স্নান করিতে গেল, আর সেই অবসরে ইন্দ্রও আসিয়া কুশের উপর হইতে অমৃত লইয়া পলায়ন করিলেন।

 সর্পগণ সেদিন খুবই আনন্দের সহিত, আর হয়ত খুব তাড়াতাড়ি স্নান আর পূজা শেষ করিয়াছিল। কিন্তু হায়! ফিরিয়া আসিয়া তাহারা দেখিল অমৃত নাই, খালি কুশ পড়িয়া রহিয়াছে। তখন তাহারা ভাবিল, “আর দুঃখ করিয়া কি হইবে? আমরা যেমন ছল করিয়া বিনতাকে দাসী করিয়াছিলাম, তেমনি ছল করিয়া আমাদের নিকট হইতে অমৃত লইয়া গিয়াছে।”

 তারপর, “আহা! এই কুশের উপর অমৃত রাখিয়াছিল গো” বলিয়া তাহারা সেই কুশ চাটিতে লাগিল। চাটিতে চাটিতে কুশের ধারে তাহাদের জিব চিরিয়া দুইভাগ হইয়া গেল। তাই আজও সাপের জিব চেরা দেখিতে পাওয়া যায়।