এইরূপে মাতাকে সর্পগণের হাত হইতে উদ্ধার করিয়া গরুড় মনের আনন্দে সাপ ধরিয়া খাইতে আরম্ভ করিল। তখন আর তাহার পেট ভরিবার জন্য কোন চিন্তা রহিল না, পৃথিবীর লোকেরও বোধহয় তাহাতে সাপের ভয় অনেকটা কমিয়া থাকিবে।
কদ্রু সর্পগণকে এই বলিয়া শাপ দিয়াছিলেন, “তোরা জনমেজয় রাজার যজ্ঞে পুড়িয়া মরিবি।”
এই শাপের কথা মনে করিয়া সাপেদের মনে বড়ই চিন্তা হইল। তাই তাহারা সকলে মিলিয়া পরামর্শ করিতে লাগিল যে, কি উপায়ে এই শাপ হইতে রক্ষা পাওয়া যায়। সংসারে মায়ের মতন গুরু কেহই নাই, তাহার শাপ বড়ই দারুণ শাপ। সুতরাং সর্পগণের মনে হইল যে, এখন হইতে বিশেষ চেষ্টা না করিলে, আর তাহাদের রক্ষা নাই।
অনেকে অনেক উপায়ের কথা বলিল।
কেহ বলিল, “আমরা ব্রাহ্মণের বেশে জনমেজয়ের নিকট গিয়া বলিব যে, “আপনি সর্পযজ্ঞ (অর্থাৎ সর্পগণকে বধ করিবার জন্য যজ্ঞ) করিবেন না। তাহা হইলে তিনি হয়ত আমাদের কথা শুনিবেন।”
কেহ বলিল, “আমরা গিয়া তাঁহার মন্ত্রী হইব। তিনি যজ্ঞের কথা পাড়িলেই, আমরা বলিব, মহারাজ! এমন কাজও করিবেন না, যজ্ঞেতে খালি পয়সা খরচ হয়, আর তাহাতে কোন লাভ নাই, বরং ইহকাল পরকাল নানারূপ কষ্ট হইয়া থাকে। আপনি আর যাহাই করুন, যজ্ঞ কখনো করিবেন না।”
অনেকে বলিল, “যে সকল ব্রাহ্মণ যজ্ঞ করিতে যাইবে, আমরা তাহাদিগকে কামড়াইয়া মারিব। তাহা হইলে আর যজ্ঞ করিবার লোক পাওয়া যাইবে না।”
আর কয়েকজন বলিল, “আমরা মেঘ হইয়া, মুষলধারে যজ্ঞের আগুনের উপর বৃষ্টি করিতে থাকিব। তাহা হইলে আগুন নিভিয়া যাইবে, আর যজ্ঞ হইবে না।”
আবার কেহ কেহ বলিল, “আমরা রাত্রিতে গিয়া যজ্ঞের সকল দ্রব্য চুরি করিয়া আনিব। তখন দেখিব, কেমন করিয়া যজ্ঞ হয়।”
ইহাতে আর কয়েকজন বলিয়া উঠিল, “এত পরিশ্রমের প্রয়োজন কি? জনমেজয়কে কামড়াইয়া দিলেই ত গোলমাল চুকিয়া যাইতে পারে।”
এইরূপে সর্পগণ বুদ্ধি খাটাইয়া অনেকরকম উপায়ের কথা বলিল। কিন্তু আসল উপায়টার কথা তাহাদের মধ্যে একজন ছাড়া আর কেহই জনিত না।
সেই সাপটির নাম ছিল, এলাপত্র।
কদ্রু সর্পদিগকে শাপ দিবার সময়, এই বিষয় লইয়া ব্রহ্মার সহিত দেবতাগণের কথাবার্তা হয়। তখন ব্রহ্মা বলেন, “যাযাবর বংশে জরৎকারু নামে মুনি জন্মগ্রহণ করিবেন, বাসুকি নাগেরও জরৎকারু নামে একটি ভগিনী আছে তাহার সহিত সেই মুনির বিবাহ হইলে, ইহাদের আস্তিক নামে একটি পুত্র হইবে। সেই আস্তিকই জনমেজয়ের যজ্ঞ বারণ করিয়া,