ধার্মিক সর্পদিগকে রক্ষা করিবেন। এই সকল কথা এলাপত্র শুনিতে পাইয়াছিল। সুতরাং সে বলিল, “এই জরৎকারু মুনিকে খুঁজিয়া বাহির করিয়া বাসুকির ভগিনীর সহিত তাহার বিবাহ দাও; তাহা হইলেই আমাদের রক্ষার উপায় হইবে।”
সমুদ্র মন্থনের সময় অনন্ত নাগ মন্থনের-দড়ি হইয়াছিলেন, তাহাতে দেবতাগণ তাঁহার উপরে অতিশয় তুষ্ট হন। এজন্য ব্রহ্মা নিজেও তাঁহাকে ধার্মিক সর্পগণের রক্ষার ঐ উপায়টি বলিয়া দেন। সুতরাং জরৎকারু মুনিকে খুঁজিয়া বাহির করিয়া, তাহার সহিত বাসুকির ভগিনীর বিবাহ দিবার জন্য বিধিমতে চেষ্টা হইতে লাগিল।
এইরূপে জনমেজয়েব জন্মের অনেক পূর্ব হইতেই সাপেরা তাহার যজ্ঞের কথা ভাবিয়া ব্যস্ত হইয়াছিল।
কিন্তু জনমেজয় কে? আর তিনি কেনই বা সাপ মারিবার জন্য এমন উৎকৃষ্ট যজ্ঞ করিয়াছিলেন? এই-সকল কথা হয়ত এখনই কেহ জিজ্ঞাসা করিয়া বসিবে। সুতরাং আগে ভাগে তাহার উত্তর দিয়া রাখা ভাল।
জনমেজয় হস্তিনার রাজা পরীক্ষিতের পুত্র। মহারাজ পরীক্ষিৎ অভিমন্যুর পুত্র, এবং অর্জুনের নাতি ছিলেন। তাঁহার তুল্য গুণবান ধার্মিক রাজা অতি অল্পই ছিল। প্রজাদিগকে তিনি নিজের পুত্রের মত পালন করিতেন।
যুদ্ধ-বিদ্যায় আর মৃগয়ায় (শিকারে) তাহার মতন কেহই ছিল না। বিশেষত মৃগয়া করিতে তিনি বড়ই ভালবাসিতেন। পরীক্ষিতের বাণ খাইয়া মৃগ আবার উঠিয়া পলাইয়াছে এমন কথা কখনো শোনা যায় নাই।
কিন্তু যাহা আর কখনো ঘটে নাই, এমন ঘটনাও মাঝে মাঝে ঘটিয়া থাকে। একথার প্রমাণ এই যে, একদিন একটি হরিণ পরীক্ষিতের বাণ খাইয়া পলায়ন করিল। হরিণটি পলায়ন করাতে তিনি কিরূপ আশ্চর্য আর ব্যস্ত হইলেন, বুঝিতে পার। তিনি ঐ মৃগের পিছু পিছু ত্রিভুবন ঘুরিয়া বেড়াইলেন, কিন্তু কিছুতেই তাহাকে ধরিতে পারিলেন না। শেষে পিপাসায় আর পরিশ্রমে নিতান্ত কাতর হইয়া, তিনি এক গোচারণের মাঠে (অর্থাৎ যে মাঠে গরু চরান হয়) আসিয়া উপস্থিত হইলেন।
সেখানে আসিয়া তিনি দেখিলেন যে, বাছুরেরা গরুর দুধ খাইবার সময়, তাহদের মুখ দিয়া যে ফেনা বাহির হয় একজন তপস্বী ক্রমাগত সেই ফেনা পান করিতেছেন। তাঁহাকে দেখিয়া রাজা বলিলেন, “হে ব্রাহ্মণ, আমি অভিমন্যুর পুত্র রাজা পরীক্ষিৎ। আমার বাণ খাইয়া একটি হরিণ পলায়ণ করিয়াছে উহা কোন দিকে গিয়াছে, আপনি দেখিয়াছেন কি?”
সেই মুনি তখন মৌনব্রত (অর্থাৎ ‘কোন কথা কহিব না’ এইরূপ নিয়ম) লইয়াছিলেন। সুতরাং তিনি রাজার কথার উত্তর দিলেন না।
একে ত হরিণটা পলাইয়া যাওয়াতে রাজার মন নিতান্তই খারাপ হইয়াছিল, তাহাতে ক্ষুধা