আরম্ভ হইল, ঋত্বিকেরা যজ্ঞভূমি মাপিয়া প্রস্তুত করাইলেন। যজ্ঞের সকল সামগ্রী আনিয়া, সেই যজ্ঞভূমি পরিপূর্ণ করা হইল।
সাপেরা এতদিন কি করিতেছিল? আমরা জানি যে, উহারা জরৎকারু মুনির সহিত বাসুকির ভগিনীর বিবাহ দিবার জন্য ব্যস্ত হইয়াছিল। তারপর কি হইল?
তখন হইতেই তাহারা এ বিষয়ে বিস্তর চেষ্টা করিতে আরম্ভ করিয়াছিল; কিন্তু নানা কারণে কাজটি তাহাদের নিকট বড়ই কঠিন বোধ হইল।
জরৎকারু মুনি সর্বদাই কঠিন তপস্যায় ব্যস্ত থাকিতেন। বিবাহ বা সংসারের অন্য কোন কাজ করার ইচ্ছা তাঁহার একেবারেই ছিল না। তপস্যা করিয়া, আর তীর্থে স্নান করিয়া তিনি, পৃথিবীময় ঘুরিয়া বেড়াইতেন। ঘর বাড়ি তাহার কিছুই ছিল না, যেখানে রাত্রি হইত, সেইখানে নিদ্রা যাইতেন। এমন লোককে ধরিয়া আনিয়া বিবাহ করাইয়া দেওয়া কি সহজ কাজ? এ কাজ হওয়ার কোন উপায়ই ছিল না, যদি ইহার মধ্যে একটি আশ্চর্য ঘটনা না হইত। ঘটনাটি এই—জরৎকারু নানা স্থানে ঘুরিতে ঘুরিতে একদিন দেখিলেন যে, একটা ভয়ঙ্কর অন্ধকার গর্তের মুখে, কয়েকটি নিতান্ত দীনহীন, রোগা, হাড্ডিসার মানুষ একগাছি খসখসের শিকড় ধরিয়া ঝুলিতেছে! উহাদের পা উপর দিকে, মাথা নীচের দিকে। একটা ইঁদুর ক্রমাগত সেই খসখসের শিকড় খানিকে কাটিয়া উহার একটি আঁশ মাত্র বাকি রাখিয়াছে। সেটুকু কাটা গেলেই বেচারারা গর্তের ভিতর পড়িয়া যাইবে। ইহাদিগকে দেখিয়া জরৎকারুর বড়ই দয়া হওয়াতে, তিনি বলিলেন, “আহা! আপনাদের অবস্থা দেখিয়া আমার বড়ই কষ্ট হইতেছে! আপনারা কে? আর কি করিয়াই বা আপনাদের এমন কষ্টের অবস্থা হইল? আমি কি আপনাদের কোন উপকার করিতে পারি?”
সেই লোকগুলি বলিলেন, “আমাদিগকে দেখিয়া তোমার দুঃখ হইয়াছে বটে, কিন্তু আমাদের দুঃখ দূর হওয়া বড় কঠিন দেখিতেছি। আমরা যাযাবর নামক ঋষি। আমরা কেহ কোন পাপ করি নাই, কেবল আমাদের বংশ-লোপ হওয়ার গতিক হওয়াতেই আমাদের এই দুর্দশা। আমাদের বংশে এখনো একটি লোক আছে, উহার নাম জরৎকারু! জরৎকারু বাঁচিয়া আছে বলিয়াই আমরা এখনো কোন মতে এই খসখসের শিকড়টুকু ধরিয়া টিকিয়া আছি, উহার মৃত্যু হইলে এই শিকড়টি ছিঁড়িয়া যাইবে, আর আমরাও এই গর্তের ভিতর পড়িয়া যাইব। সেই মূর্খ কেবল তপস্যা করিয়াই বেড়ায়; কিন্তু উহার তপস্যায় আমাদের কি ফল হইবে? তাহার চেয়ে সে যদি বিবাহ করিত, আর তাহার পুত্র পৌত্র হইত, তবে আমরা এই বিপদ হইতে রক্ষা পাইতাম। বৎস, আমাদের দশা দেখিয়া তোমার দয়া হইয়াছে, তাই বলি, যদি সেই হতভাগার সঙ্গে তোমার দেখা হয়, তবে দয়া করিয়া আমাদের কথা তাহাকে বলিও।”
হায়, কি কষ্টের কথা! পূর্বপুরুষেরা এমন ভয়ানক কষ্টে পড়িয়াছেন, আর সেই কষ্টের কারণ জরৎকারু নিজে। এ কথা ভাবিয়া তিনি যার পর নাই দুঃখের সহিত কাঁদিতে কাঁদিতে