পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৫১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫১৮
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

নাই। তোমাদের দয়া হইলে আমি একটু তামাশা দেখিয়া আসি।”

 প্রশংসা শুনিয়া দারোয়ানেরা বড়ই খুশি হইল। তারপর আর তাহারা আস্তিককে ঢুকিতে দিতে আপত্তি করিল না।

 ভিতরে গিয়া আস্তিক জনমেজয়কে বলিতে লাগিলেন, “হে মহারাজ! আপনি এমন সুন্দর যজ্ঞ করিতেছেন যে, কি বলিব। মহারাজ! আমি প্রার্থনা করি, আমার বন্ধুগণের মঙ্গল হউক। প্রাচীনকালের অতি প্রসিদ্ধ রাজা আর মুনি ঋষিগণ যে-সকল মহা মহা যজ্ঞ করিয়াছিলেন, আপনার এই যজ্ঞও তেমনি হইয়াছে। মহারাজ! আমি প্রার্থনা করি আমার বন্ধুগণের মঙ্গল হউক। কত বড় বড় মুনিগণ আপনার যজ্ঞে কাজ করিতেছেন, ইঁহারা যে কত বড় পণ্ডিত, তাহা আমি বলিয়া শেষ করিতে পারি না। আর আপনি যে কিরূপ ধার্মিক রাজা, তাহা মনে করিলেই বড় সুখ হয়।”

 নিজের প্রশংসা শুনিলে, দেবতার মনও খুশি হয়। আর সেই প্রশংসা যদি আস্তিকের ন্যায় অপরূপ সুন্দর একটি বালকের সুমিষ্ট কথায় হয়, তবে তার উপর সন্তুষ্ট না হইয়া কেহই থাকিতে পারে না। সুতরাং জনমেজয় বলিলেন, “হে মুনিগণ, আপনাদের কি অনুমতি হয়? আমার ত ইচ্ছা হইতেছে যে, এই সুন্দর বালকটি যাহা চায়, তাহা তাহাকে দিয়া দেই।”

 তখন রাজা আস্তিকের বর দিতে গেলে, প্রধান মুনি একটু বিরক্ত হইয়া বলিলেন, “মহারাজ তক্ষক কিন্তু এখনো আসিল না।”

 তাহাতে জনমেজয় বলিলেন, “আপনারা তক্ষককে শীঘ্র উপস্থিত করিবার চেষ্টা করুন।”

 তখন, সেই লাল চোখওয়ালা লোকটি—যে বলিয়াছিল যে, এক ব্রাহ্মণ যজ্ঞে বাধা দিবে—বলিল, “মহারাজ তক্ষক ইন্দ্রের নিকট আশ্রয় লইয়াছে, তাই তাহাকে সহজে আনা যাইতেছে না।”

 মুনিরাও বলিলেন, “হ্যাঁ এ কথা ঠিক।”

 ইহাতে প্রধান মুনি ইন্দ্রের পূজা আরম্ভ করিলেন। তখন আর ইন্দ্র চুপ করিয়া স্বর্গে থাকিবেন কিরূপে? তাঁহাকে পূজার স্থানে যাত্রা করিতেই হইল। তক্ষক দেখিল মহা বিপদ! ইন্দ্রকে ছাড়িয়া যাইতেও ভরসা হয় না, তাঁহার সঙ্গে যাইতেও সাহস হয় না। অনেক ভাবিয়া চিন্তিয়া, সে ইন্দ্রের চাদরের ভিতরে লুকাইয়া রহিল।

 এদিকে রাজা জনমেজয় দেখিলেন যে, ইন্দ্রের আশ্রয় পাইয়া তক্ষক তাঁহাকে ফাঁকি দিতেছে। সুতরাং তিনি ক্রোধভরে মুনিদিগকে বলিলেন, “যদি ইন্দ্র তক্ষককে লুকাইয়া রাখেন, তবে তাঁহাকে সুদ্ধই দুষ্টকে পোড়াইয়া মারুন।”

 রাজার কথায় মুনিগণ তক্ষকের নাম লইয়া অগ্নিতে আহুতি দিবামাত্র ইন্দ্রকে সুদ্ধই সে কাঁপিতে কাঁপিতে আকাশের ভিতর দিয়া আসিয়া দেখা দিল। তখন ইন্দ্র প্রাণের ভয়ে তক্ষককে ছাড়িয়া ব্যস্তভাবে প্রস্থান করিলে, তক্ষক ঘুরিতে ঘুরিতে ক্রমে যজ্ঞের আগুনের কাছে আসিতে লাগিল। তাহাতে ব্রাহ্মণেরা বলিলেন, “মহারাজ, আর চিন্তা নাই। ঐ দেখুন তক্ষক চ্যাঁচাইতে চ্যাঁচাইতে এদিকে আসিতেছে। এখন বালকটিকে বর দিতে পারেন।”

 তাহা শুনিয়া রাজা বলিলেন, “হে ব্রাহ্মণকুমার, এখন তুমি যাহা চাহ তাহাই দিব। বল তোমার কি বর চাই?”