গঙ্গা বললেন, “তোমার জন্য আমি অবশ্য পৃথিবীতে আসিব। কিন্তু আমি স্বর্গ হইতে পৃথিবীতে পড়িবার সময় পৃথিবী ত আমার বেগ সহ্য করিতে পারবে না। সে সময়ে যদি মহাদেব আসিয়া মাথা পাতিয়া আমাকে নেন; তবেই এ কাজ সম্ভব হয় নহিলে এ জগতে এমন আর কিছুই নাই যাহা আমার বেগ সহিতে পারে। তুমি মহাদেবকে তুষ্ট করিয়া, এ কাজটি তাঁহাকে দিয়া করাইয়া লইতে পার কি না দেখ।”
গঙ্গার কথায় ভগীরথ কৈলাসপর্বতে গিয়া, শিবকে সন্তুষ্ট করিবার জন্য ঘোরতর তপস্যা আরম্ভ করিলেন। একে শিব সহজেই সন্তুষ্ট হন, তাহাতে এমন তপস্যা! কাজেই তাঁহাকে গঙ্গার প্রস্তাবে সম্মত করিতে ভগীরথের অধিক বিলম্ব হইল না।
সাধারণ পাহাড় পর্বত হইতে যে নদীর জল গড়াইয়া পড়ে, তাহার তামাশা দেখিবার জনাই লোকে কত পরিশ্রম করিয়া দেশ বিদেশে যায়। সুতরাং গঙ্গার স্বর্গ হইতে পড়িবার সময় যে দেবতা, অসুর, যক্ষ, রাক্ষস প্রভৃতি সকলে ছুটিয়া তামাশা দেখিতে আসিবে, তাহা বিচিত্র কি? সে সময়ে সেই ঘোরতর ঝর্ঝর গর্জনে নিশ্চয়ই ত্রিভুবন কাঁপিয়া গিয়াছিল; ফেনায় মহাদেবের জটা সাদা হইয়া গিয়াছিল; আর আকাশ ছাইয়া সেই জলের কণা উড়িয়াছিল। সেই জলকণায় রোদ পড়িয়া যে কি সুন্দর রামধনুক হইয়াছিল, তাহা যে দেখে নাই, সে কি করিয়া বুঝিবে?
এইরূপে স্বগ হইতে পৃথিবীতে নামিয়া গঙ্গা ভগীরথকে বলিলেন, “এখন বল বাবা, কোন পথে যাইব?” তখন ভগীরথ আগে আগে পথ দেখাইয়া চলিলেন, আর তাহার পিছু পিছু গঙ্গা কলকল শব্দে ছুটিয়া আসিতে লাগিলেন। এমনি করিয়া শেষে তাহারা সমুদ্রের উপস্থিত হইলে, গঙ্গার জলে ভিজিয়া সাগরের পুত্রগণের উদ্ধার হইল, আর সাগর যে এতদিন শুকনো পড়িয়াছিল, তাহাও পরিপূর্ণ হইল। সে সময়ে সাগরের জল অতিশয় মিষ্ট ছিল। তারপর একবার সমুদ্রের দুর্বুদ্ধি হওয়াতে, সে বিষ্ণুকে অবহেলা করে। তখন বিষ্ণু তাহার শরীরের ঘাম দিয়া তাহাকে লোনা করিয়া দেন।
শর্মিষ্ঠা ও দেবযানীর কথা
বৃষপর্বা দানবদিগের রাজা, শুক্রাচার্য তাহাদের গুরু। শুক্রচার্যের কন্যার নাম দেবযানী, বৃষপর্বার কন্যার নাম শর্মিষ্ঠা। একদিন দানবের মেয়েরা বনে বেড়াইতে গেল, দেবযানী আর শর্মিষ্ঠাও তাহাদের সঙ্গে গেলেন।
স্নানের পর পরিবার জন্য মেয়েরা যে কাপড় আনিয়াছিল, তাহা এক জায়গায় সাজাইয়া রাখিয়া, তাহারা আমোদ আহ্লাদ করিতেছিল। ইহার মধ্যে কখন বাতাস আসিয়া সেই-সকল কাপড় উল্টোপাল্টা করিয়া দিয়াছে, কেহ তাহা টের পায় নাই। সুতরাং তাহারা নিজের নিজের কাপড় খুঁজতে গিয়া ভুল করিতে লাগিল। শর্মিষ্ঠা যে কাপড়খানি হাতে লইলেন, সেখানি ছিল দেবযানীর আর দেবযানী তাহাতে রাগিয়া গিয়া শর্মিষ্ঠাকে বলিলেন, “হ্যা লো, অসুরের মেয়ে, তুই কোন্ সাহসে আমার কাপড় নিতে গেলি?”
এ কথায় শর্মিষ্ঠা বলিলেন, “দেখ্ দেবযানী, আমি মহারাজ বৃষপর্বার কন্যা। তোর পিতা