সকলের ছোট পুরু যযাতি বলিবামাত্রই তাঁহার কথায় রাজি হইলেন। ইহাতে যযাতি পুরুর উপর নিতান্ত সন্তুষ্ট হইয়া তাঁহাকে এই বলিয়া আশীর্বাদ করিলেন, “তোমার রাজ্যে প্রজারা চিরকাল পরম সুখে বাস করবে।”
তারপর পুরুর যৌবন লইয়া যযাতি একহাজার বৎসর নানারূপ সৎকার্যে সুখে সময় কাটাইলেন। একহাজার বৎসর শেষ হইলে পুরুর যৌবন তাঁহকে ফিরাইয়া দিয়া এবং তাঁহাকে রাজসিংহাসনে বসাইয়া, তিনি তপস্যার জন্যে বনে চলিয়া গেলেন।
অনেক যাগ যজ্ঞ এবং বহুকালের কঠোর তপস্যার ফলে যযাতির বিস্তর পুণ্য সঞ্চয় হওয়ায় মৃত্যুর পর স্বর্গে গিয়া কয়েক হাজার বৎসর তাঁহার বড়ই সুখে কাটিল। তারপর একদিন ইন্দ্রের সহিত তাঁহার দেখা হওয়ায় ইন্দ্র কথায় কথায় তাঁহাকে জিজ্ঞাস করিলেন, “মহারাজ, বল দেখি, তুমি কিরূপ তপস্যা করিয়াছিলে?”
যযাতি বলিল, ‘সে আর কি বলিব? আমার সমান তপস্যা এই ত্রিভুবনে কেহ কখনো করিতে পারে নাই।’
যযাতির এই অহঙ্কারে ইন্দ্র নিতান্ত অসন্তুষ্ট হইয়া বলিলেন, মহারাজ, অন্যে কিরূপ তপস্যা করিয়াছে, বা না করিয়াছে, তাহা না জানিয়াই তুমি সকলের অপমান করিলে। এই দোষে তুমি আজই স্বর্গ হইতে পড়িয়া যাইবে।’
তাহাতে যযাতি বলিলেন, ‘যদি পড়িতে হয়, তবে যেন ভালো লোকের নিকট পড়ি।’
ইন্দ্র বলিলেন, ‘তুমি ভালো লোকদের মধ্যেই পড়িবে।’
এইরূপে কথাবার্তার পর যযাতি স্বর্গ হইতে পড়িয়া যাইতে লাগিলেন। পড়িতে পড়িতে তিনি স্বর্গ আর পৃথিবীর মাঝামাঝি আসিয়াছেন, এমন সময়, সেই শূন্যের উপরে, বসুমান, অষ্টক, প্রতর্দন ও শিবি রাজার সহিত তাঁহার দেখা হইল।
এই চারিজন রাজা পৃথিবীতে অশেষ পুণ্য সঞ্চয় করিয়া স্বর্গে যাইতেছিলেন। ইঁহারা যযাতিকে আগুনের মতন তেজের সহিত পৃথিবীর দিকে পড়িতে দেখিয়া আশ্চর্য হইয়া তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, ‘হে যুবক, তুমি কে? আর কি জন্যই বা স্বর্গ ছড়িয়া পৃথিবীতে চলিয়াছ?’
ইহার উত্তরে যযাতির নিকট সকল কথা শুনিয়া, ইঁহারা সকলেই বলিলেন, ‘মহারাজ, আমাদের পুণ্যের যে ফল, তাহা আপনাকে দিতেছি আপনি আমাদের সঙ্গে স্বগে চলুন।’
এ কথায় যযাতি প্রথমে সম্মত হন নাই। তিনি কহিলেন, ‘দান ব্রাহ্মণেরাই লইয়া থাকে। আমি রাজা, আমি দান করিতেই পারি—দান লইতে যাইব কেন?’
কিন্তু সেই চারিজন রাজা যযাতিকে কিছুতেই ছড়িলেন না। সুতরাং তাঁহাদের পুণ্যের জোরে, তাঁহাকে আবার স্বর্গে যাইতে হইল।
দুষ্মন্ত ও শকুন্তলার কথা
এমন মায়ের কথা কি কেহ শুনিয়াছ যে, সে তাহার কচি খুকিটিকে নদীর ধারে ফেলিয়া নিষ্ঠুর ভাবে চলিয়া যায়? মেনকা নামে এক অপ্সরা ঠিক এমনি নিষ্ঠুর ছিল। তাহার একটি খুকি হইল, আর সে তাহকে মালিনী নদীর ধারে ফেলিয়া, পাষাণীর মতন চলিয়া গেল।