বুদ্ধুর বাপ বললে, ‘সে তো ভাই, অমনি দেখানো যায় না! তাতে ঢের জিনিসপত্র লাগে।’
বাঘ বললে, ‘আমি সব জিনিস এনে দিচ্ছি। আমাকে সেটা না দেখালে হবে না।’
বুদ্ধুর বাপ বললে, ‘আচ্ছা, তুমি আগে জিনিস আনো, তারপর আমি দেখাব।’
বাঘ বললে, ‘কি জিনিস চাই?’
বুদ্ধুর বাপ বললে, ‘একটা খুব বড় আর মজবুত থলে চাই, এক গাছি খুব মোটা আর লম্বা দড়ি চাই, আর একটা মস্ত বড় মুগুর চাই!’
বাঘ বললে , ‘শুধু এই চাই? এসব আনতে আর কতক্ষণ?’
সেটা হাটের দিন ছিল। বাঘ গিয়ে হাটের পথের পাশে ঝোপের ভিতর লুকিয়ে রইল। খানিক বাদেই সেই পথ দিয়ে তিনজন খইওয়ালা যাচ্ছে। খইওয়ালাদের থলেগুলি খুব বড় হয়, আর তার এক-একটা ভারি মজবুত থাকে।
বাঘ ঝোপের ভিতর বসে আছে, আর খইওয়ালারা একটু একটু করে তার সামনে এসেছে, অমনি সে ‘হালুম’ বলে লাফিয়ে এসে রাস্তার মাঝখানে দাঁড়াল। খইওয়ালারা তো খই-টই ফেলে, চেঁচিয়ে কোথায় পালাবে তার ঠিক নেই।
তখন বাঘ তাদের খইসুদ্ধ থলেগুলি এনে বুদ্ধুর বাপকে দিল। তারপর সে গেল দড়ি আনতে।
দড়ির জন্য তার আর বেশী দূর যেতে হল না। মাঠে ঢের গরু খোঁটায় বাঁধা ছিল, বাঘ তাদের কাছে যেতেই তারা দড়ি ছিঁড়ে পালাল। সেই সব দড়ি এনে সে বুদ্ধুর বাপকে দিল। তারপর সে গেল মুগুর আনতে।
পালোয়ানেরা তাদের আড্ডায় মুগুর ভাঁজছে, এমন সময় বাঘ গিয়ে সেখানে উপস্থিত হল। তাতেই তো ‘বাপ রে, মা রে!’ বলে তারা ছুট দিল। তখন বাঘ তাদের বড় মুগুরটা মুখে করে এনে বুদ্ধুর বাপকে বললে, ‘তোমার জিনিস তো এনেছি, এখন সেটাকে দেখাও।’
বুদ্ধুর বাপ বললে, ‘আচ্ছা, তবে তুমি একটিবার এই থলের ভিতরে এস দেখি।’
বলতেই তো বাঘমশাই গিয়ে সেই থলির ভিতরে ঢুকেছেন। তখন বুদ্ধুর বাপ তাড়াতাড়ি থলের মুখ বন্ধ করে, তাকে আচ্ছা করে দড়ি দিয়ে জড়াল। একটু নড়বার জো অবদি রাখল না।
তারপর দু-হাতে সেই মুগুর তুলে ধাঁই করে সেই থলের উপর যেই এক গা লাগিয়েছে, অমনি বাঘ ভারি আশ্চর্য হয়ে বললে, ‘ও কি করছ?’