পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৫৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫৩৮
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

 এ কথায় ইন্দ্র হাত তুলিয়া উচ্চৈঃস্বরে বলিলেন, “তাহা হইতে পারে না। অশ্বিনীকুমারেরা নিতান্তই সামান্য দেবতা, চিকিৎসা করিয়া খায়। উহাদিগকে কখনই সোমরস[] দেওয়া যাইতে পারে না।”

 চ্যবন বলিলেন, “অশ্বিনীকুমারেরা আমাকে দেবতার ন্যায় সুখী এবং সুস্থ করিয়াছেন, তাঁহারা সোমরস পাইবেন না, আর কেবল আপনারাই যত সোমরস খাইবেন, ইহা ত ভালো কথা নহে। আপনি যেমন দেবতা, তাঁহাদিগকেও তেমনি দেবতা বলিয়া জানিবেন।”

 তথাপি ইন্দ্র ক্রমাগতই বলিতে লাগিলেন, “সে কি কথা। উহারা চিকিৎসক, হীন জাতি,[]উহারা কি করিয়া সোমরস খাইবে?”

 ইন্দ্রের কথায় কান না দিয়া চ্যবন নিজ হাতে অশ্বিনীকুমারদিগের জন্য সোমরস ঢালিতে লাগিলেন। তাহা দেখিয়া ইন্দ্র বিষম রাগের সহিত বলিলেন, “যদি তুমি উহাদিগকে সোমরস ঢালিয়া দাও, তাহা হইলে এখনই বজ্র দিয়া তোমাকে বধ করিব।”

 এ কথায় চ্যবন একটু হাসিলেন, কিন্তু তিনি সোমরস ঢালিতে ছাড়িলেন না।

 ইহাতে ইন্দ্র রাগে অস্থির হইয়া চ্যবনকে মারিবার জন্য বজ্র উঠাইলে, সকলের প্রাণ ভয়ে কাঁপিয়া উঠিল। কিন্তু চ্যবন ভয়ও পাইলেন না, পলায়নও করিলেন না। তিনি কেবল একটি কি মন্ত্র পড়িতে পড়িতে, যজ্ঞের আগুনে খানিকটা ঘি ফেলিয়া দিলেন। আর অমনি, সংসারে যত ভয়ঙ্কর জিনিস আছে তাহাদের সকলের চেয়ে ভয়ানক, মদ নামক অতি বিকটাকার একটা অসুর সেই আগুন হইতে উঠিয়া আসিল। সে হাঁ করিবামাত্র তাঁহার এক ঠোঁট মাটিতে আর এক ঠোঁট স্বর্গে গিয়া ঠেকিল। তখন দেখা গেল যে, তাহার ছোট ছোট দাঁতগুলিরই এক একটি দশযোজন লম্বা। আর বড় দাঁত চারিটির ত কোনটিই একশত যোজনের কম হইবে না। উহার চোখ দুইটা সূর্যের মত জ্বলিতেছে, আর হাত পা যে কোথায় গিয়া ঠেকিয়াছে, তাহার ঠিকানাই নাই। সে অসুর যখন তাহার হাজার যোজন লম্বা লক্‌লকে জিবখানি বাহির করিল, তখন সকলের মনে হইল, বুঝি সে সৃষ্টি সুদ্ধ চাটিয়া খায়। তারপর যখন সে ইন্দ্রের দিকে আড় চোখে চাহিয়া ঠোঁট চাটিতে চাটিতে ঘোরতর ঘোঁৎ ঘোঁৎ শব্দে তাঁহাকে খাইতে আসিল, তখন তিনি প্রাণপণে চ্যাঁচাইয়া বলিতে লাগিলেন, “ও ঠাকুর মহাশয়, রক্ষা করুন। আরে হাঁ হাঁ। অশ্বিনীকুমারেরা সোমরস খাইবে, খাইবে। রক্ষা করুন।”

 সুতরাং তখন চ্যবন দয়া করিয়া দেবরাজকে অসুরের হাত হইতে রক্ষা করিলেন, আর অশ্বিনীকুমারেরাও, সেই অবধি, সকল যজ্ঞেই সোমরসের ভাগ পাইতে লাগিলেন।

 এইরূপে চ্যবন তাঁহার প্রতিজ্ঞা রাখিয়া সুকন্যার সহিত নিজের আশ্রমে চলিয়া আসিলে, তাঁহাদের সময় অতি সুখেই কাটিতে লাগিল।


রুরু ও প্রমদ্বরার কথা

 পূর্বকালে স্থূলকেশ নামে একজন পরম ধার্মিক তপস্বী ছিলেন। একদিন তিনি ফল আনিতে বনে গিয়াছিলেন, ফিরিয়া আসিয়া দেখিলেন যে, একটি নিতান্ত ছোট খুকিকে কে


  1. সোমলতা নামক একপ্রকার লতার রস খাইতে দেবতারা বড়ই ভালবাসিতেন।}}
  2. দেবতাদিগের ভিতরেও ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শূদ্র প্রভৃতি জাতি আছে। অশ্বিনীকুমারেরা শূদ্র জাতীয় দেবতা।