বুদ্ধুর বাপ বললে, ‘কেন? ‘ইঁড়ি-মিড়ি-কিঁড়ি-বাঁধন দেখাচ্ছি। তোমার ভয় হয়েছে নাকি?’
ভয় হয়েছে বললে তো ভারী লজ্জার কথা হয়, তাই বাঘ বললে ‘না।’
তখন বুদ্ধুর বাপ সেই মুগুর দিয়ে ধাঁই ধাঁই করে থলের উপর মারতে লাগল। চ্যাঁচালে পাছে নিন্দে হয়, তাই মার খেয়েও বাঘ অনেকক্ষণ চুপ করে ছিল। কিন্ত চুপ করে আর কতক্ষণ থাকবে! দশ-বারো ঘা খেয়েই সে ‘ঘেয়াও ঘেঁয়াও করে ভয়ানক চ্যাঁচালে লাগল। খানিক বাদে আর চ্যাঁচাতে না পেরে, গোঙাতে আরম্ভ করল। বুদ্ধুর বাপ তবুও ছাড়ছে না , ধাঁই-ধাঁই করে সে খালি মারছেই। শেষে আর বাঘের সাড়া শব্দ নেই দেখে সে ভাবলে, মরে গেছে। তখন থলে খুলে, বাঘটাকে ক্ষেতের ধারে ফেলে রেখে বুদ্ধুর বাপ ঘরে এসে বসে রইল।
বাঘ কিন্ত মরেনি। চার-পাঁচ ঘন্টা মরার মত পড়ে থেকে, তারপর সে উঠে বসেছে। তখনো তার গায় বড্ড বেদনা, আর জ্বর খুব। কিন্ত রাগের চোটে সেসবে মন দিল না। সে খালি চোখে ঘোরায় আর দাঁত খিঁচায়, আর বলে ‘বেটা বুদ্ধুর বাপ। পাজি, হতভাগা, লক্ষ্মীছাড়া! দাঁড়া, তোকে দেখাচ্ছি।’
সেই কথা শুনেই তো ভয়ে বুদ্ধুর বাপের মুখ শুকিয়ে গেল। সে তখুনি ঘরে দোর দিয়ে হুড়কো এঁটে বসে রইল। তিনদিন আর ঘর থেকে বেরুল না।
বাঘ সেই তিনদিন বুদ্ধুর বাপের ঘরের চারধারে ঘুরে বেড়াল, আর তাকে গালি দিল। তারপর করেছে কি-দরজার খুব কাছে এসে খুব ভালমানুষের মতন করে বলছে, “আমাকে একটু আগুন দেবে দাদা? তামাক খাব!’
বুদ্ধুর বাপ দেখলে, কথাগুলি মানুষের মতো, কিন্ত গলার আওয়াজটা বাঘের মতো। তখন সে ভাবলে, আগুন দেবার আগে একবার ভালো করে দেখে নিতে হবে। এই ভেবে সে যেই দরজার ফাঁক দিয়ে উঁকি মেরেছে, অমনি দেখে, সর্বনাশ-বাঘ! তখন আর কি সে দরজা খোলে! সে কোঁকাতে কোঁকাতে বললে, ‘ভাই বড্ড জ্বর হয়েছে, দোর খুলতে পারবো না। তুমি দরজার নীচ দিয়ে তোমার লাঠিগাছটা ঢুকিয়ে দাও, আমি তাতে আগুন বেঁধে দিচ্ছি।’
বাঘ লাঠি কোথায় পাবে? সে তার লেজটা দরজার নীচ দিয়ে ঢুকিয়ে দিল। অমনি বুদ্ধুর বাপ বঁটি দিয়ে খ্যাঁচ করে সেই লেজ কেটে ফেললে।