পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৫৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫৪২
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

 সর্প কহিল, ‘ছেলেবেলায় ‘খগম’ নামে আমার একটি বন্ধু ছিলেন। তিনি সর্বদাই তপস্যা করিতেন, আর কখনো মিথ্যা কথা কহিতেন না। একদিন আমি, তামাশা দেখিবার জন্য একটা খড়ের সাপ লইয়া তাঁহাকে ভয় দেখাইতে গেলাম, আমি জানিতাম না যে, সেই খড়ের সাপের ভয়ে তিনি অজ্ঞান হইয়া যাইবেন। জ্ঞান হইলে পর তিনি রাগে অস্থির হইয়া আমাকে এই শাপ দিলেন যে, তুমি যে খড়ের সাপ দিয়া আমাকে ভয় দেখাইলে সেই খড়ের সাপের মত অকর্মণ্য সাপ তুমি হইবে। খগমের তপস্যার তেজ আমি জানিতাম, তাই তাঁহার কথা শুনিয়া আমি জোড়হাতে বলিলাম, ‘ভাই, আমি তামাশা করিতে গিয়া একটা অপরাধ করিয়া ফেলিয়াছি। আমাকে তুমি ক্ষমা কর আর কঠিন শাপ হইতে আমাকে বাঁচাইয়া দাও।’

 ইহাতে খগমের চোখে জল আসিল, তিনি কাঁদিতে কাঁদিতে বলিলেন, ‘ভাই, নিষ্ঠুর কথা মুখে আনিয়া ফেলিয়াছি, এখন ত আর উপায় দেখি না। এখন আমি যাহা বলিতেছি, মন দিয়া শুন, আর কখনো ভুলিও না। মতির পুত্র রুরুর সহিত দেখা হইলে তোমার শাপ দূর হইবে।

 কি আশ্চর্য! সাপ তাহার কথা ভালো করিয়া শেষ করিতে না করিতেই তাহার চেহারা একটু একটু করিয়া মানুষের মত হইতে লাগিল। তখন সে বলিল, বুঝিয়াছি, আপনি সেই প্রমতির পুত্র রুক। তাই আপনার দর্শন পাইয়া আজ আমার শাপ দূর হইল।’ বলিতে বলিতে সহস্রপাদ তাহার নিজের সুন্দর মূর্তিতে উঠিয়া দাঁড়াইলেন। তারপর তিনি স্নেহের সহিত রুরুকে অনেক সুন্দর উপদেশ দিয়া সেখান হইতে প্রস্থান করিলেন।


নল ও দময়ন্তীর কথা

 বিদর্ভ দেশে ভীম নামে এক রাজা ছিলেন। দেশ বিদেশের লোকে তাঁহার গুণের কথা বলিত। ধনে, জনে, যশে, মানে, তাঁহার সুখের সীমা ছিল না। কিন্তু এক দুঃখে তাঁহার সকল সুখ মাটি হইয়া গিয়াছিল। সোনার সংসার দিয়া কি হইবে, যদি তাহা খালি পড়িয়া থাকিল? রাজা নিশ্বাস ফেলিতেন, আর বলিতেন, ‘হায়, আমার এ ধন কে খাইবে? আমার যে সন্তান নাই।

 একদিন মহামুনি দমন রাজার সঙ্গে দেখা করিতে আসিলেন। রাজা রানী তাঁহার পায়ের ধূলা লইয়া, বসিতে সোনার আসন দিলেন। সুবাসিত জল দিয়া নিজ হাতে তাঁহার পা ধুইয়া দিলেন। তারপর মুক্তার ঝালর দেওয়া চন্দনের পাখা লইয়া দুজনে তাহাকে বাতাস করিতে লাগিলেন। মুনি সন্তুষ্ট হইয়া বলিলেন, মহারাজা, তোমরা আমাকে যেমন খুশি করিলে, আমিও তোমাদের তেমনি সুখী করিব। আমার বরে তোমাদিগের একটি লক্ষ্মীর মতন কন্যা ও তিনটি পুত্র হইবে।

 বর দিয়া মুনি চলিয়া গেলেন, রাজাও মনে করিলেন, “এতদিনে যদি আমাদের দুঃখের শেষ হয়।

 তারপর ক্রমে রাজার তিনটি ছেলে আর একটি মেয়ে হইল। মুনির নাম ছিল দমন, সেই