পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৫৬৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মহাভারতের কথা
৫৬৫

 তাবপর বিদর্ভ দেশে লোক গিয়া দময়ন্তী, ইন্দ্রসেন, আর ইন্দ্রসেনাকে লইয়া আসিল।

 তারপর কি হইল?—

 তারপর বড়ই আনন্দ হইল!


সত্যবান্ ও সাবিত্রীর কথা

 মদ্র দেশে অশ্বপতি নামে এক রাজা ছিলেন। ধার্মিক, দাতা, সত্যবাদী— মহারাজ অশ্বপতি সকল গুণে পৃথিবীর সকল রাজার বড়, ইহার উপরে যদি তাঁহার একটি সন্তান থাকিত, তবে বড়ই সুখের কথাই হইত।

 ভালো একটি সন্তান পাওয়া দেবতার বিশেষ কৃপার কথা। মহারাজ একটি সন্তানের জন্য আঠার বৎসর ধরিয়া সাবিত্রী দেবীর আরাধনা করিলেন। আঠার বৎসর দিনের শেষে সামান্য জলযোগ মাত্র করিয়া কাটাইলেন।

 শেষে দেবীর কৃপায় হইল। তিনি যজ্ঞের অগ্নি হইতে অতি মনোহর বেশে উঠিয়া আসিয়া, বাজাকে বলিলেন, “মহারাজ, আমি তুষ্ট হইয়াছি; বর প্রার্থনা কর।”

 অশ্বপতি ভূমিতে লুটাইয়া দেবীকে প্রণামপূর্বক করজোড়ে কহিলেন, “দেবি যদি তুষ্ট হইয়া থাকেন, তবে দয়া করিয়া এই বর দিন যে, আমার যেন অনেকগুলি সন্তান হয়।”

 দেবী কহিলেন, “মহারাজ, তোমার জন্য আমি ব্রহ্মাকে বলিয়াছিলাম। তিনি বলিয়াছেন, তোমার একটি পরমাসুন্দরী আর অতি গুণবতী কন্যা হইবে।”

 দেবী চলিয়া গেলেন। কিছুদিন পরে রাজার ঘর আলো করিয়া, রানীর কোলে চাঁদের মত সুন্দর একটি কন্যা আসিল। সাবিত্রী দেবীর দয়ায় কন্যাটিকে পাইয়াছেন, তাই রাজা তাঁহার নাম রাখিলেন, সাবিত্রী।

 যেমন দেবতার নামে নাম, তেমনি মেয়েটি দেখতে দেবতার এত সুন্দর! বিধাতা যেন সোনার সহিত সকালবেলার সূর্যের আলোেক মিশাইয়া তাঁহার শরীরখানি গড়িয়াছিলেন। লোকে মোহিত হইয়া একদৃষ্টে তাঁহাকে চাহিয়া দেখিত, আর ভাবিত, না জানি কোন্ দেবতার মেয়ে আমাদের রাজার ঘর আলো করিতে আসিয়াছেন।

 সাবিত্রী ক্রমে বড় হইয়া উঠিলেন, আর ক্রমেই তাঁহার মনে ভগবানের প্রতি ভক্তি জাগিয়া উঠিল। ভগবানের কৃপায়, সকল সময়েই তাঁহার মুখে এমন আশ্চর্য একটি তেজ দেখা যাইত যে, রাজপুত্রেরা তাঁহাকে দেখিলেই নিজেদের চঞ্চলতার কথা ভাবিয়াই লজ্জিত হইতেন। সেই লজ্জায় তাঁহাদের কেহই সাবিত্রীকে বিবাহ করিতে আসিতে সাহস পাইলেন না।

 একদিন সাবিত্রী স্নানের পর দেবতার পূজা করিয়া, রাজার নিকট আসিয়া দাঁড়াইলে, তাঁহার সেই অপরূপ মূর্তি দেখিয়া রাজা নিতান্ত দুঃখের সহিত চিন্তা করিতে লাগিলেন, ‘হায়! মায়ের এমন সুন্দর মূর্তি এমন সকল গুণ—মাকে কেহই বিবাহ করিতে আসিল না।’

 তারপর তিনি সাবিত্রীকে বলিলেন, “মা লক্ষ্মি, ধনরত্ন লোকজন সঙ্গে দিব, সোনার রথ সাজাইয়া দিব, একবার দেশ ভ্রমণ করিয়া আইস, যদি কোন রাজপুত্রকে দেখিয়া তোমার