তখন হইতে পরীক্ষিতের সময় খুব সুখেই কাটিতে লাগিল। ইহার পর আর সুশোভনা জল দেখিতে আপত্তি করেন নাই।
বামদেব ও বামীর কথা
পরীক্ষিতের তিনপুত্র; শল, দল আর বল।
শল বড় হইলে তাঁহার হাতে রাজ্য দিয়া পরীক্ষিত তপস্যা করিবার জন্য বনে চলিয়া গেলেন।
একদিন শল মৃগয়া করিতে গিয়া একটা হরিণকে তাড়া করিলেন। কিন্তু তাঁহার সাবথি অনেক চেষ্টা করিয়াও তেমন বেগে রথ চালাইতে পারিল না। রাজা, ‘জোরে চালাও! বলিয়া বেচারাকে কতই ধমকাইলেন; কিন্তু ধমকের জোরে যদি ঘোড়াব পায়ে জোর হইত, তবে আর কথা কি ছিল। শেষে সারথি ভয়ে ভয়ে হাত জোড় করিয়া বলিল, “মহারাজ, আমার উপরে ক্রোধ করিবেন না; এসকল ঘোড়া দিয়া ও হরিণকে ধবা একেবারে অসম্ভব। মহারাজের রথে যদি বামী জোতা থাকিত, তবে নাহয় একবার চেষ্টা করিয়া দেখিতাম।”
বামীর কথা শুনিয়া রাজা বলিলেন, “সে আবার কিরকম ঘোড়া? শীঘ্র বল, আমি তাহাই নাহয় আনিয়া লইব।”
এ কথায় সারথি বড়ই সঙ্কটে পড়িল। মহর্ষি বামদেবের দুটি আশ্চর্য ঘোড়া ছিল, তাহাদেরই নাম বামী। রাজার কথার উত্তর দিলে হয়ত তিনি ঐ দুই ঘোড়া লইয়া আসিবেন। আর যদি তিনি তাহা ফিরাইয়া না দেন, তবে মুনিঠাকুর হয়ত সারথির উপর চটিয়া গিয়া তাহাকে শাপ দিয়া ভস্ম করিবেন; কাজেই সে কোন কথা বলিতে সাহস না পাইযা চুপ করিয়া রহিল। ইহাতে রাজা বিষম ভুকুটিপূর্বক ক্রোধভরে তলোযাব উঠাইয়া বলিলেন, “বটে রে দুষ্ট, তুই আমাব কথার উত্তর দিবি না? এখনই তোর মাথা কাটিব।”
তখন আর সারথি কি করে? সে প্রাণের ভয়ে কাপিতে কাপিতে বলিল, “বামদেবের খুব ভাললা দুটি ঘোড়া আছে, তাহাদেরই নাম বামী!"
রাজা বলিলেন, “তবে এখনই বামদেবের আশ্রমে লইয়া চল!”
দেখিতে দেখিতে রথ বামদেবের আশ্রমে উপস্থিত হইল। মুনি যখন দেখিলেন যে, তাহার ঘোড়া দুটি রথে জুতিয়া হরিণ ধরিবার জন্য রাজা বড়ই ব্যস্ত হইয়াছেন, তখন আর তিনি ঘোড়া দিতে আপত্তি করিলেন না; কিন্তু রাজাকে বিশেষ করিয়া বলিয়া দিলেন, “আপনার কাজ হইয়া গেলেই ঘোড়া দুটি ফিরাইয়া দিবেন।”
রাজা বলিলেন, “তাহা আর বলিতে? আমি অবশ্যই ঘোড়া ফিরাইয়া দিব!”
এই বলিয়া ত রথে মুনির ঘোড়া জুতিযা রথ হাঁকান আরম্ভ হইল। আশ্রমের বাহিরে গিয়াই রাজা সারথিকে বলিলেন, “কি বল হে সারথি। এত ভালো ঘোড়া দিয়া মুনির কি কাজ? এ গোড়া আমার ঘোড়াশালে থাকিলেই মানাইবে ভালো, মুনিকে আর উহা ফিরাইয়া দিবার কোন প্রয়োজন নাই।”
সারথি আর কি বলিবে? সে চুপ করিয়া রহিল।
একমাস চলিয়া গেল, তথাপি রাজা ঘোড়া ফিরাইয়া দিলেন না দেখিয়া, বামদেব তাঁহার