দুষ্ট ব্রাহ্মণকে সংহার করিব!”
এ কথায় বামদেব হাসিয়া বলিলেন, “বান ছুঁড়িতে পারিলে তবে ত আমাকে মারিবে!”
বাস্তবিকই, রাজা বাণ ছুঁড়িতে গিয়া দেখেন, তাঁহার হাত অসাড় হইয়া গিয়াছে। তিনি আর তাহা নাড়িতে পারেন না! তখন তিনি ভয়ে অস্থির হইয়া বলিলেন, “আমি যে অবশ হইয়া গিয়াছি। মুনিঠাকুরের সঙ্গে বিবাদ করিয়া আমার কাজ নাই!”
এমনি করিয়া রাজার ভালো বুদ্ধি আসিল। তারপর রানী বামদেবকে মিষ্ট কথায় তুষ্ট করিলে, তিনি দলের অপরাধ মার্জনাপূর্বক তাঁহাকে বর দিয়া, ঘোড়া দুইটি লইয়া আহ্লাদের সহিত আশ্রমে ফিরিলেন।
মুনির বরে রাজার পাপ দূর হইল। ইহার পর তিনি আর কোন অন্যায় কাজ করেন নাই।
আয়োদধৌম্য ও তাঁহার শিষ্যগণের কথা
আরুণি
মহর্ষি আয়োদধৌম্যের আরুণি নামে একটি শিষ্য ছিলেন। একদিন আয়োদধৌম্য আরুণিকে বলিলেন, “বৎস আরুণি, ক্ষেত্রে জল বাহির হইয়া যাইতেছে; তুমি শীঘ্র গিয়া আল বাঁধিয়া তাহা বন্ধ কর।”
গুরুর কথায় আরুণি তখনই ছুটিয়া গিয়া আল বাঁধিতে আরম্ভ করিলেন, কিন্তু একে বরষার জল, তাহাতে বেলে মাটি সে বালির বাঁধ বাঁধিতে না বাঁধিতেই জলে ধুইয়া নিতে লাগিল, আরুণি প্রাণপণে পরিশ্রম করিয়াও তাহা রাখিতে পারিলেন না।
কিন্তু আরুণি একটি কাজ আরম্ভ করিয়া তাহা সহজে ছাড়িবার লোক ছিলেন না, জল যতই বাঁধ ভাসাইয়া নিতে লাগিল, তিনিও ততই মাটি চাপাইতে লাগিলেন। যখন তাহাতেও কোন ফল হইল না। তখন তিনি নিজেই সেখানে শুইয়া পড়িলেন। ইহাতে জলও থামিল, আরুণির মনও খুশি হইল।
এদিকে সন্ধ্যা হইয়া যাইতেছে, তথাপি আরুণি ঘরে ফিরিতেছেন না। দেখিয়া মহর্ষি তাঁহার শিষ্যগণকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “আরুণি কোথায় গেল?” শিষ্যেরা বলিলেন, “ভগবন্, আজ সকালে আপনি তাহাকে ক্ষেতের আল বাঁধিতে পাঠাইয়াছিলেন; তাহার পর আর সে ঘরে ফিরে নাই।”
এ কথায় মহর্ষি নিতান্ত ব্যস্ত হইয়া বলিলেন, “বল কি? এখনো সে ফিরে নাই? তবে হয়ত তাহার কোন বিপদ হইয়াছে। শীঘ্র চল; তাহার খোঁজ লইতে হইবে।”
এই বলিয়া আয়োদধৌম্য ক্ষেতের ধারে গিয়া আরুণিকে ডাকিতে লাগিলেন—“বৎস আরুণি! কোথায় তুমি? শীঘ্র আইস!”
গুরুর ডাক শুনিয়া আরুণি আস্তে আস্তে জল হইতে উঠিয়া আসিয়া তাঁহাকে প্রণাম করিলে, মুনি জিজ্ঞাসা করিলেন, “বৎস, এতক্ষণ কোথায় ছিলে?”
আরুণি কহিলেন, “ভগবন্, আমি আর কিছুতেই জল আট্কাইতে না পারিয়া সেখানে এতক্ষণ শুইয়াছিলাম। এখন কি করিতে হইবে, অনুমতি করুন।”