পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৫৭৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মহাভারতের কথা
৫৭৯

 আরুণির কথা শুনিয়া মহর্ষির বড় দয়া হইল। তিনি বলিলেন, “তোমার মঙ্গল হউক, বৎস! আমার বরে তুমি সকল শাস্ত্রে অদ্বিতীয় পণ্ডিত হইবে। আর তুমি আল ফুঁড়িয়া আমার নিকট উঠিয়া আসিয়াছ, এজন্য আজ হইতে তোমার নাম উদ্দালক হইবে।”

 এইরূপে আরুণি সকল বিদ্যা লাভ করিয়া, গুরুকে প্রণামপূর্বক আহ্লাদের সহিত দেশে চলিয়া গেলেন।


উপমন্যু

 আয়োদধৌম্যের আর একটি শিষ্যের নাম ছিল উপমন্যু। একদিন মহর্ষি উপমন্যুকে বলিলেন, “বৎস, তোমার উপর আমার গরু চরাইবার ভার রহিল। যত্নের সহিত আমার গরুগুলিকে রাখিবে।”

 উপমন্যু পরম যত্নে মহর্ষির গরু চরাইতে আরম্ভ করিলেন। সারাদিন গরু চরাইয়া সন্ধ্যাকালে আশ্রমে ফিরিয়া, তিনি গুরুকে প্রণামপূর্বক জোড়হাতে তাঁহার সম্মুখে দাঁড়াইতেন। মহর্ষি দেখিলেন, উপমন্য দিন দিন মোটা হইতেছে। ইহাতে তিনি আশ্চর্য হইয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “বৎস, তোমাকে ত ক্রমেই বেশ হৃষ্ট-পুষ্ট দেখিতেছি তুমি কি আহার কর?

 উপমন্যু বলিললেন, “ভগবন, আমি ভিক্ষা করিয়া যাহা পাই, তাহাই আহার করি।”

 মুনি বলিলেন, “সে কি? ভিক্ষা করিয়া তুমি যাহা পাও, আমাকে না জানাইয়া তুমি তাহা আহার কর? ইহাত’ ঠিক হইতেছে না!”

 তখন হইতে উপমন্যু ভিক্ষার জিনিস আনিয়া গুরুর হাতে দেন। গুরু তাহা সমস্তই নিজে রাখেন, উপমন্যুকে কিছুই দেন না।

 উপমন্যু তাহাতেই সন্তুষ্ট থাকিয়া সারাদিন গরু চরান, আর সন্ধ্যাকালে আসিয়া গুরুকে প্রণামপূর্বক জোড়হাতে তাঁহার সম্মুখে দাঁড়ান। মুনি দেখিলেন, তথাপি উপমন্যু দিন দিন মোটাই হইতে চলিয়াছেন; তাহাতে তিনি আশ্চর্য হইয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “বৎস উপমন্যু তুমি ভিক্ষা করিয়া যাহা আন, তাহার সমস্তই ত আমি রাখিয়া দিই; তথাপি তোমাকে বেশ হৃষ্ট-পুষ্ট দেখিতেছি। এখন তুমি কি আহার কর?”

 উপমন্যু বলিলেন, “ভগবন্, আমি একবারের ভিক্ষার জিনিস আপনাকে দিয়া, তারপর আবার নিজের জন্য ভিক্ষা করি।” মহর্ষি বলিলেন, “ইহা ত অন্যায়! ইহাতে অন্যের ভিক্ষার ক্ষতি হইতেছে, আর তোমারও লোভ বাড়িয়া যাইতেছে। ভদ্রলোকের এমন কাজ করিতে নাই।”

 উপমন্যু তাহাতেই রাজি হইয়া সারাদিন গরু চরান, আর সন্ধ্যা হইলে, গুরুর নিকট আসিয়া, তাঁহাকে প্রণামপূর্বক জোড়হাতে দাঁড়াইয়া থাকেন। মুনি দেখিলেন, তথাপি উপমন্যু মোটা হইতেছেন। তিনি আশ্চর্য হইয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “বৎস, তুমি একবার ভিক্ষা করিয়া আনিয়া সমস্তই আমাকে দাও, তারপর আর নিজের জন্য ভিক্ষা কর না;তবে তুমি কি করিয়া মোটা হইতেছ? এখন কি খাও?”

 উপমন্যু বলিলেন, “ভগবন্, এখন আমি গরুর দুধ খাই।”

 মহর্ষি বলিলেন, “আমি ত তোমাকে গরুর দুধ খাইতে অনুমতি দিই নাই, তবে তুমি তাহা