দড়ি ছিঁড়ে বনে চলে গেল।
বনের ভিতরে এক জায়গায় করাতীরা করাত দিয়ে কাঠ চিরত। একটা মস্ত কাঠ আধখানা চিরে রেখে, সেইখানে গোঁজ মেরে করাতীরা চলে গিয়েছে। একই সময় বাঘ বনের ভিতর এসে দেখে, শিয়াল সেই আধচেরা কাঠখানার উপর বিশ্রাম করছে।
শিয়াল তাকে দেখেই বললে, ‘কি মামা, বিয়ে কেমন হল?’
বাঘ বললে, ‘না ভাগ্নে, ওরা বড্ড বেশী ঠাট্রা করে। তাই আমি চলে এসেছি।’
শিয়াল বললে, ‘তা বেশ করেছ। এখন এস, দুজনে বসে গল্প-সল্প করি।’
বলতেই বাঘ লাফিয়ে কাঠের উপর উঠেছে, আর বসেছে ঠিক যেখানটায় কাঠটা খুব হাঁ করে আছে, সেইখানে। তার লেজটা সেই ফাঁকের ভিতরে ঢুকে ঝুলে রয়েছে।
শিয়াল দেখলে যে, এবার কাঠ থেকে গোঁজটি খুলে নিলেই বেশ তামাশা হবে। সে বাঘকে নানান ভাষায় ভোলাচ্ছে, আর একটু-আধটু করে গোঁজটিকে নাড়ছে। নাড়তে-নাড়তে এমন করছে যে, এখন টানলেই সেটা খুলে যাবে, আর কাঠ বাঘের লেজ কামড়ে ধরবে। তখন সে ‘মামা, গেলুম!’ বলে সেই গোঁজসুদ্ধ মাটিতে পড়ে গড়াগড়ি দিতে লাগল।
আর বাঘের যে কি হল, সে আর বলে কি হবে? কাঠ লেজ কামড়ে ধরতেই তো সে বেজায় চেঁচিয়ে এক লাফ দিল। সেই লাফে ফটাং করে লেজ ছিঁড়ে একেবারে দুইখান। তখন বাঘও শিয়ালের সঙ্গে মাটিতে গড়াগড়ি দিতে লাগল।
বাঘ বললে, ‘ভাগ্নে গেলুম! আমার লেজ ছিঁড়ে গিয়েছে।’
শিয়াল বললে, ‘মামা গেলুম! আমার কোমড় ভেঙ্গে গিয়েছে!’
এমনি করে দুজনে গড়াগড়ি দিয়ে এক কচুবনে ঢুকে শুয়ে রইল। বাঘ আর নড়তে-চড়তে পারে না। কিন্ত শিয়াল বেটার কিচ্ছু হয় নি, সে আগাগোড়াই বাঘকে ফাঁকি দিচ্ছে।
সেই কচুবনের ভিতর ঢের ব্যঙ ছিল, শিয়াল শুয়ে শুয়ে তাই ধরে পেট ভরে খেল। বাঘ বেদনায় অস্থির, সে ব্যঙ দেখতেই পেল না-খাবে কি! কিন্ত তার এমনি খিদে পেয়েছে যে, কিছু না খেলে সে মরেই যাবে! তখন সে শিয়ালকে জিগগেস করলে, ‘ভাগ্নে, তুমি কিছু খেয়েছ নাকি?’
শিয়াল বললে, ‘আর কি খাব? একটু কচুই খেয়েছি। খেয়ে আমার পেট বড্ড ফেপেছে।’
বাঘ আর কি করে। সে কচুই চিবিয়ে খেতে লাগল। তারপর গলা ফুলে, মুখ ফুলে, সে যায় আর কি!