পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৫৮০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫৮০
উপেন্দ্রকিশাের রচনাসমগ্র

কি করিয়া খাও? ইহা অত্যন্ত অন্যায়।”

 উপমন্যু লজ্জিত হইয়া বলিলেন, “যে আজ্ঞা।”

 তারপর তিনি সারাদিন গরু চরান, সন্ধ্যাকালে মুনির নিকট আসিয়া দাঁড়ান। তাঁহার শরীর তখনো মোটাই হইতেছে। তাহা দেখিয়া মুনি বলিলেন, “বৎস, তুমি নিজের জন্য আর ভিক্ষা কর না, গরুর দুধ খাওয়াও ছাড়িয়া দিয়াছ। তথাপি তোমাকে হৃষ্ট-পুষ্টই দেখিতেছি। এখন তুমি কি খাও?”

 উপমন্যু বলিলেন, “বাছুরেরা গরুর দুধ খাইবার সময় তাহাদের মুখ দিয়া যে ফেনা বাহির হয়। আমি এখন তাহাই খাই।”

 মহর্ষি বলিলেন, “আহা ওরূপ করিতে নাই। বাছুরদের যে দয়া, তুমি ফেনা খাইতে গেলে, উহারা তোমার জন্য বেশি করিয়া ফেনা বাহির করিবে। কাজেই তাহাদের নিজেদের পেট ভরিবে না।”

 উপমন্যু মাথা হেঁট করিয়া বলিলেন, “যে আজ্ঞা!"

 এখন বেচারার আহারের পথ একেবারেই বন্ধ হইল। নিজের জন্য ভিক্ষা করিবার জো নাই। দুধ খাইবার অনুমতি নাই। তথাপি তিনি ক্ষুধা তৃষ্ণায় ভুগিয়া যথাশক্তি যত্নের সহিত মহর্ষির গরু চরাইতে লাগিলেন। ক্ষুধা যখন অসহ্য হইল, তখন সামনের একটা আকন্দ গাছ দেখিতে পাইয়া, তাহারই কতকগুলি পাতা চিবাইয়া খাইলেন। সে সর্বনেশে গাছের যে কি সর্বনেশে পাতা, উহা খাইবামাত্র উপমন্যুর চোখ ভয়ঙ্কর টাটাইয়া, ক্রমে তাহা একেবারে অন্ধ হইয়া গেল। তথাপি তিনি যথাশক্তি মহর্ষির গরু চরাইতে ত্রুটি করিলেন না। এইরূপে গরু লইয়া ঘুরিতে ঘুরিতে একদিন তিনি এক কুয়ার ভিতরে পড়িয়া গেলেন।

 এদিকে আয়োদধৌম্য সন্ধ্যাকালে উপমন্যুকে ফিরিতে না দেখিয়া শিষ্যদিগকে বলিলেন, “দেখ, উপমন্যু আজ এখনো ঘরে ফিরিল না; বোধ হয় আমি তাহার আহাব বন্ধ করিয়া দেওয়াতে সে রাগ করিয়াছে। চল ত দেখি, সে কোথায় গেল।”

 বনের ভিতরে আসিয়া মহর্ষি ব্যস্তভাবে উপমন্যুকে ডাকিতে লাগিলেন। গুরুর ডাক শুনিয়া উপমন্যু কুয়ার ভিতর হইতে চিৎকারপূর্বক বলিলেন,“ভগবন্, আমি কুয়ার ভিতরে পড়িয়া গিয়াছি।”

 ইহাতে মহর্ষি আশ্চর্য হইয়া বলেন, “তুমি কেমন করিয়া কুয়ায় পড়িলে?

 উপমন্যু বলিলেন, “আকন্দের পাতা খাইয়া অন্ধ হইয়া গিয়াছিলাম, তাহাতেই কুয়ায় পড়িয়াছি।”

 মহর্ষি বলিলেন, “অশ্বিনীকুমারদিগের স্তব কর; তোমার চক্ষু ভালো হইবে।

 এ কথায় উপমন্যু অশ্বিনীকুমারদিগের অনেক স্তব-স্তুতি করিলে, তাঁহারা তাঁহার নিকট উপস্থিত হইয়া বলিলেন, “আমরা তোমার স্তবে অতিশয় তুষ্ট হইয়াছি। তাই তোমার জন্য একটি পিঠা আনিয়াছি, তুমি ইহা আহার কর।”

 উপমন্যু দেবতাদিগকে প্রণামপূর্বক বিনয়ের সহিত বলিলেন, “আপাদের কথা ত অবহেলার যোগ্য নয়। কিন্তু আগে গুরুকে না দিয়া আমি কেমন করিয়া ইহা খাইব?”

 অশ্বিনীকুমারের বালিলেন, “তোমার গুরুকেও একবার আমরা একটি পিষ্টক দিয়াছিলাম আর তাহা তিনি তাঁহার গুরুকে না বলিয়াই খাইয়াছিলেন, তিনি যাহা করিয়াছিলেন, তাহা