উপস্থিত হইতে পারিবে।”
এই কথা বলিয়া সেই দয়াবান্ উজ্জ্বল পুরুষ উতঙ্ককে তাঁহার ঘোড়ায় চড়াইয়া দিলে, তিনি চক্ষুর নিমেষে গুরুগৃহে আসিয়া উপস্থিত হইলেন। উপাধ্যায়ানী ততক্ষণে স্নান আহ্নিক সারিয়া চুল বাঁধিতে বসিয়াছিলেন। আর উতঙ্কের বিলম্ব দেখিয়া মনে করিতে ছিলেন, ‘উহাকে শাপ দিই; এমন সময় উতঙ্ক আসিয়া তাঁহাকে প্রণামপূর্বক কুণ্ডল দিবামাত্র,তাঁহার রাগের বদলে মুখ দিয়া হাসি বাহির হইয়া গেল। তিনি অতিশয় আনন্দের সহিত উতঙ্কের হাত হইতে কুণ্ডল লইয়া বলিলেন, “ভালো আছ ত বাপ? বড় সময়ে আসিয়া দেখা দিয়াছ। আমি এখনই তামাকে শাপ দিতেছিলাম—ভাগ্যিস্ দিই নাই! এখন আশীর্বাদ করি, তোমার মঙ্গল হউক, তুমি চিরজীবী হইয়া সুখে থাক।”
এইরূপে উতঙ্ক উপাধ্যায়ানীকে সন্তুষ্ট করিয়া বেদের নিকট আসিয়া তাঁহাকে প্রণাম করিলে, তিনি জিজ্ঞাসা করিলেন, “ভালো আছ ত বৎস? এত বিলম্ব করিলে কেন?”
এ কথার উত্তরে, উতঙ্ক তক্ষকের হাতে নিজের লাঞ্ছনার কথা সমস্তই গুরুকে জানাইয়া, বলিলেন, “গুরুদেব, পাতলে গিয়া আমি দেখিলাম, দুটি স্ত্রীলোক সাদা সূতায় আর কালো সূতায় কাপড় বুনিতেছে। আর ছয়টি ছেলে বারটি খুঁটি দেওয়া একখানি চাকা ঘুরাইতেছে আর-একজন অতি উজ্জ্বল পুরুষ ঘোড়ায় চড়িয়া আছে। যাইবার সময় পথে এক ষাঁড়ের উপরে একজন পুরুষকে দেখিয়াছিলাম। তিনি আমাকে বড়ই নোংরা জিনিস খাওয়াইলেন, আর বলিলেন, আপনাকেও নাকি তাহা খাওযাইয়াছেন। আমি ত ইহাদের কাহাকেও চিনিতে পারিলাম না; ইঁহারা কে?”
বেদ বলিলেন, “বৎস, ঐ স্ত্রী লোক দুটি জীবাত্মা আর পরমাত্মা। চাকাখানি বৎসর, বারটি খুঁটি বার মাস, ছেলে ছয়টি ছয় ঋতু উজ্জ্বল পুরুষ পর্জন্য; ঘোড়াটি অগ্নি। পথে যে ষাঁড় দেখিয়াছ, তাহা ঐরাবত, তাহার উপরে যিনি ছিলেন, তিনি ইন্দ্র; আর তুমি যাহা খাইয়াছিলে, তাহা অমৃত। ইন্দ্র আমার বন্ধু, তাই তিনি দয়া করিয়া তোমাকে অমৃত খাওয়াইয়াছিলেন; নহিলে, সাপের দেশ হইতে তোমার বাঁচিয়া আসা ভার হইত। এখন আশীর্বাদ করি, তোমার মঙ্গল হউক, তুমি মনের সুখে ঘরে চলিয়া যাও।”
গুরুকে ভক্তির সহিত প্রণাম করিয়া উতঙ্ক তাঁহার নিকট বিদায় হইলেন, কিন্তু তিনি দেশে না গিয়া, গেলেন সটান হস্তিনায়, জনমেজয়ের কাছে। তক্ষকের উপর তাঁহার যে খুবই রাগ হইয়াছিল, এ কথা কেহ না বলিয়া দিলেও আমরা অনুমান করিয়া লইতে পারিতাম। সেই দুষ্ট তক্ষককে সাজা দিবার জন্যই, তাঁহার জনমেজয়ের নিকট যাওয়া। তাহার ফল কি হইয়াছিল তাহা আমরা জানি।
বশিষ্ঠ ও বিশ্বামিত্রের কথা
মহামুনি বশিষ্ট ব্রহ্মার পুত্র। ধর্ম আর ক্ষমাগুণে তাঁহার সমান কেহই ছিল না। তাঁহার ক্ষমার কথা শুনিলে পুণ্যলাভ হয়। কান্যকুব্জ দেশে কুশিক নামে এক রাজা ছিলেন। কুশিকের পুত্র গাধি; গাধির পুত্র বিশ্বামিত্র।
একদিন বিশ্বামিত্র পাত্রমিত্র সঙ্গে লইয়া মৃগয়া করিবার নিমিত্ত এক গভীর বনের ভিতরে