পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৫৮৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫৮৮
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

 সরস্বতী তখন কাঁপিতে কাঁপিতে বশিষ্ঠের নিকট গিয়া নিতান্ত দুঃখের সহিত বলিলেন, “ভগবন্‌, বিশ্বামিত্র অতিশয় ক্রোধভরে আমাকে আদেশ করিয়াছেন যে, আপনাকে তাঁহার নিকট লইয়া যাইতে হইবে। এখন উপায় কি হয়?

 সরস্বতীর মুখ মলিন দেখিয়া বশিষ্টের বড়ই দয়া হইল; তিনি বলিলেন, “মা তুমি কোন চিন্তা করিও না;এখনই আমাকে বিশ্বামিত্রের নিকট লইয়া যাও। নহিলে তিনি তোমাকে শাপ দিবেন।”

 সরস্বতী ভাবিলেন, “এমনি লোকের অনিষ্ট আমি করিতে পারিব না আমি বিশ্বামিত্রের কথাও রাখিব, বশিষ্টকেও বাঁচাইব।”

 তারপর বশিষ্ঠ নদীর কুলে বসিয়া জপ করিতে লাগিলেন। সরস্বতী মনে করিলেন, এই আমার সুযোগ; এই বেলা কুল ভাঙ্গিয়া দেই।”

 নদীর বেগে বশিষ্ঠকে সুদ্ধ কুল ভাঙ্গিয়া পড়িল; নদীর খরতর স্রোত তাহাকে বহিয়া, দেখিতে দেখিতে বিশ্বামিত্রের ঘাটে উপস্থিত করিল। তাহা দেখিয়া বিশ্বামিত্র ভাবিলেন, ‘এখন ইহাকে বধ করি।’

 এই মনে করিয়া বিশ্বামিত্র বশিষ্ঠকে মারিবার জন্য অস্ত্র খুঁজিতে গেলেন। এদিকে সরস্বতী দেখিলেন যে, বিশ্বামিত্রের কথা রাখা হইয়াছে;এখন বশিষ্ঠকে রক্ষা করিবার সময় উপস্থিত। সুতরাং তিনি বিশ্বামিত্র ফিরিয়া আসিবার পূর্বেই, তাড়াতাড়ি বশিষ্ঠকে অপর পারে দিয়া আসিলেন।

 বিশ্বামিত্র অস্ত্র হাতে আসিয়া যখন দেখিলেন, বশিষ্ঠ নাই, তখন তিনি রাগে চোখ লাল করিয়া সরস্বতীকে এই বলিয়া শাপ দিলেন, “তোর জল রক্ত হইয়া যাউক!”

 অমনি সরস্বতীর জল রক্ত হইয়া গেল, আর রাক্ষসেরা আসিয়া আনন্দে নৃত্য করিতে করিতে তাহা পান করিতে লাগিল।

 এইরূপে দিন যায়। এক বৎসর পরে কয়েকজন তপস্বী সেই তীর্থে স্নান করিতে আসিয়া দেখিলেন, নদীতে রক্তধারা বহিতেছে। ইহাতে তাঁহারা নিতান্ত আশ্চর্য হইয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “হে সরস্বতি! তোমার এমন দশা কি করিয়া হইল?”

 সরস্বতী কাঁদিতে কাঁদিতে বলিলেন, “বিশ্বামিত্রের শাপে আমার এই দশা হইয়াছে।”

 এই বলিয়া তিনি তপস্বীদিগকে সকল কথা জানাইলে, তাঁহারা বলিলেন, “এমন কথা? আচ্ছা মা, আমরা তোমার দুঃখ দুর করিয়া দিব।”

 তারপর সেই দয়ালু তপস্বীগণ সকলে মিলিয়া শিবের আরাধনা করিতে লাগিল এবং মহাদেব তুষ্ট হইয়া তথায় উপস্থিত হইলে, তাঁহারা বলিলেন, “ভগবন্‌, দয়া করিয়া এই নদীর দুঃখ দূর করুন।”

 এ কথায় মহাদেব তথাস্তু বলিবামাত্র, সরস্বতীর আবার পূর্বের ন্যায় সুমিষ্ট নির্মল জল হইল।

 বশিষ্ঠের একশত পুত্র ছিলেন, তাঁহাদের সকলের বড়টির নাম ছিল শক্তি। একবার কল্মাষপাদ নামক অযোধ্যার এক রাজার সহিত শক্তির বিবাদ হইল। রাজা রথে চড়িয়া যাইতেছিলেন, শক্তি পথের মাঝখানে ছিলেন। রাজা শক্তিকে বলিলেন, “এইয়ো! পথ ছাড়িয়া দাও!”