পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৫৯৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫৯৬
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

হইলেও সম্মানের পাত্র। শীঘ্র ইঁহাদিগকে পথ ছাড়িয়া দাও।’

 অষ্টাবক্র আবার বলিলেন, ‘মহারাজ, আমরা বড় সাধ করিয়া আপনার যজ্ঞ দেখিতে আসিয়াছি, আর আপনার ঐ দরোয়ান বেটা আমাদিগকে ঢুকিতে দিতেছে না, ইহাতে আমাদের অত্যন্ত রাগ হইয়াছে। অনুগ্রহ করিয়া উহাকে দ্বার ছাড়িয়া দিতে বলুন।’

 তখন দরোয়ান বলিল, “ঠাকুর, আমাদের দোষ নাই, আমরা বন্দীর হুকুমে কাজ করি। তিনি বৃদ্ধ পণ্ডিত ব্রাহ্মণদিগকেই ঢুকিতে দিতে বলিয়াছেন, ছেলেপিলেকে ঢুকিতে দিতে নিষেধ করিয়াছেন।’

 অষ্টাবক্র বলিলেন, ‘পণ্ডিতকে যে ঢুকিতে দাও, সে ত খুব ভাল কথা। কিন্তু খালি কি বুড়া হইলেই পণ্ডিত হয়, আর চুল দাড়ি সাদা না হইলে আর দাঁত সবগুলি পড়িয়া না গেলে পণ্ডিত হয় না? আমরা যে পণ্ডিত নহি, তাহা তুমি কি করিয়া বুঝিলে?

 দরজায়ান বলিল, “ঠাকুর, তোমার যতখানি বয়স হইয়াছে, লেখাপড়া শিখিতে তাঁহার চেয়ে ঢের বেশি সময় লাগে। ছেলেমানুষ আসিয়া বুড়ার মত কথা কহিলেই কি সে পণ্ডিত হইয়া যায়?

 অষ্টাবক্র বলিলেন, “আচ্ছা বাপু। তুমি নাহয় মহারাজকেই জিজ্ঞাসা করিয়া দেখ না। আজ আমরা সভায় গিয়া যখন তর্কের চোটে তোমাদের বন্দী মহাশয়ের ধন্ধ লাগাইয়া দিব, তখন বুঝিবে কে বেশি পণ্ডিত।”

 দারোয়ান বলিল, “তোমরা ছেলেমানুষ তোমাদিগকে অমনি কি করিয়া ঢুকিতে দিই? একটু অপেক্ষা কর, দেখি কৌশলে ঢুকাইতে পারি কি না। নাহয়, তোমরাও একটু চেষ্টা কর।”

 তখন অষ্টাবক্র আবার রাজাকে বলিলেন, “মহারাজ, শুনিয়াছি আপনার বন্দী নাকি বড়ই পণ্ডিত, সে সকলকে তর্কে হারাইয়া জলে ডুবাইয়া মারে। আপনার লোকটি কোথায়? আমি তাহাকে একটিবার দেখিতে চাহি। আপনারা দেখুন, আজ আমি তাহাকে জলে ডুবাইতে পারি কি না।”

 রাজা বলিলেন, “ঠাকুর, তুমি বন্দীর কথা ভাল করিয়া জান না। তাই ওরূপ কহিতেছ। বড় বড় পণ্ডিতেরা তাঁহার নিকট হারিয়া গিয়াছেন, তাঁহাকে কেহই হারাইতে পারেন নাই।”

 অষ্টাবক্র বলিলেন, “মহারাজের কথায় স্পষ্টই বুঝা যাইতেছে যে, বন্দী আমার মত লোকের হাতে পড়ে নাই, তাই তাহার বড়াই। আমার সঙ্গে একটিবার তর্ক করিলে, উহার ঠিক পথের মাঝখানে ভাঙ্গা গাড়ির মত দুর্দশা হইবে।”

 ইহাতে রাজা খুব শক্ত শক্ত কথা জিজ্ঞাসা করিয়া অষ্টাবক্রকে পরীক্ষা করিতে লাগিলেন। অষ্টাবক্র সে-সকল কথার যে উত্তর দিলেন, তাহা শুনিয়া রাজাকে বলিতে হইল, “ব্রাহ্মণ কুমার, তোমাকে সামান্য মানুষ বলিয়া বোধ হইতেছে না। আমি তোমাকে দ্বার ছাড়িয়া দিলাম; ঐ দেখ বন্দী বসিয়া আছেন।”

 তখন অষ্টাবক্র বন্দীকে ডাকিয়া বলিলেন, “হে বন্দী, আইস, আমরা তর্ক করি! আমি যে কথা কহিব, তুমি তাহার উত্তর দিবে;আর তুমি যে কথা কহিবে, আমি তাহার উত্তর দিব। যে ঠকিয়া যাইবে, তাহাকে জলে ডুবাইয়া দেওয়া হইবে।”

 এ কথায় বন্দী সম্মত হইলে, অমনি অষ্টাবক্রের সহিত তাঁহার কথার লড়াই আরম্ভ