পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৫৯৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫৯৮
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

জলে ডুবিতে ইহার কোন ভয়ের কারণ দেখি না।”

 বন্দী বলিলেন, “ঠিক কথা! ইহাতে আমার কিছুমাত্র ভয়ের কারণ নাই। আর আমি নিশ্চয় বলিতেছি, অষ্টাবক্র এখনই তাঁহার পিতা কহোড়ের দেখা পাইবেন!”

 এ কথা শেষ হইতে না হইতেই, বন্দী যে-সকল ব্রাহ্মণকে জলে ডুবাইয়াছিলেন, তাঁহারা সকলে আবার জল হইতে উঠিয়া আসিলেন। তখন কাহোড় জনককে বলিলেন, “মহারাজ! লোকে এই জন্যই পুত্র লাভ করিতে চাহে। আমি যাহা করিতে পারি নাই আমার পুত্র অনায়াসে তাহা করিল। মহারাজ আপনার মঙ্গল হউক!”

কাহোড়ের কথা শেষ হইলে বন্দী জনককে বলিলেন, “মহারাজ আপনার আশ্রয়ে কয়েক বৎসর পরম সুখে বাস করিয়াছিলাম; এখন আপনার অনুমতি হইলে, আমি আমার পিতার নিকট ফিরিয়া যাইতে চাহি।”

 এই বলিয়া বারবার জনককে আশীর্বাদ পূর্বক, বন্দী হাসিতে হাসিতে সমুদ্রের জলে গিয়া প্রবেশ করিলেন।

 এদিকে অষ্টাবক্র নিজের পিতাকে সম্মুখে পাইয়া মনের আনন্দে তাঁহার পায়ের ধূলা মাথায় লইলেন;তারপর উপস্থিত ব্রাহ্মণদিগের নিকট অনেক আশীর্বাদ এবং জনকের নিকট রাশি রাশি ধন পাইয়া, কাহোড় এবং শ্বেতকেতুর সহিত গৃহে ফিরিলেন। সেখানে আসিয়া অষ্টাবক্র জননীকে প্রণাম পূর্বক তাঁহার সহিত কিছুকাল কথাবার্তা কহিবার পর, কাহোড় তাহাকে বলিলেন, “বৎস! তুমি শীঘ্র আশ্রমের নিকটের ঐ নদীটিতে স্নান করিয়া আইস।”

 কি আশ্চর্য! অষ্টাবক্র নদীতে স্নান করিবামাত্র তাঁহার খোঁড়া পা, নুলো হাত, কুঁজো পিঠ, বাঁকা মুখ, একপেশে নাক আর কোঁকড়ান কান দূর হইয়া, দেবকুমারের মত পরম সুন্দর চেহারা হইল। নদীতে স্নান করিয়া অষ্টাবক্রের অঙ্গ সমান হইয়াছিল বলিয়া তদবধি সেই নদীর নাম ‘সমঙ্গা’ হইয়াছে। অষ্টাবক্রের দেবতার সমান রূপ সত্ত্বেও, এখনো আমরা তাঁহাকে অষ্টাবক্রই বলিয়া থাকি। শিশুকালে বাঁকা শরীর লইয়া তিনি যে মহৎ কাজ করিয়াছিলেন, তাঁহার এই নামটি যেন তাঁহার কথা মনে করিয়া দিবার জন্যই রহিয়া গিয়াছে। তোমরা কিন্তু তাঁহার বাঁকা মূর্তি কল্পনা করিয়া লইও না। তিনি অতি সুন্দর পুরুষ ছিলেন।


পরশুরাম

 কান্যকুব্জের রাজা গাধির সত্যবতী নামে একটি রূপবতী কন্যা ছিলেন। ঔর্বের পুত্র মহর্ষি ঋচীক সেই কন্যাকে অতিশয় ভালবাসিতেন, এবং তাহাকে বিবাহ করিবার জন্য রাজার নিকট প্রার্থনা করেন।

 ঋচীক রূপে, গুণে, জ্ঞানে, ধর্মে পরম সুপাত্র বটেন, কিন্তু তিনি নিতান্ত দরিদ্র, নিজে দুইবেলা পেট ভরিয়া খাইতে পারেন, এমন সঙ্গতি তাঁহার নাই। এমন দরিদ্রের সহিত কন্যার বিবাহ দিতে রাজার কিছুতেই ইচ্ছা হইল না। সুতরাং ঋচীক দুঃখের সহিত গৃহে ফিরিতে প্রস্তুত হইলেন।

 তখন রাজা ভাবিলেন, ‘তাই ত, এমন মহাপুরুষকে অমনি ফিরাইয়া দেওয়াটা দেখিতে কেমন হয়? ইহাতে লোকে নিন্দা করিতে পারে, আর ইনিও বিরক্ত হইতে পারেন, সুতরাং