ইঁহাকে সোজাসুজি “না”, না বলিয়া, কৌশল পূর্বক ফিরাইয়া দিই।’
এই মনে করিয়া তিনি ঋচীককে বলিলেন, “আমাদের কুলের একটি নিয়ম আছে যে, আমরা কন্যার বিবাহ দিবার সময়ে বরের নিকট হইতে পণ গ্রহণ করিয়া থাকি। সত্যবতীকে বিবাহ করিতে হইলে, আপনাকে পণ দিতে হইবে; আপনি কি তাহা আনিতে পারিবেন?”
ঋচীক বলিলেন, “কিরূপ পণ, তাহা জানিতে পারিলে, একবার চেষ্টা করিয়া দেখিতে পারি।”
রাজা বলিলেন, “সমস্ত শরীর ধবধবে কেবল একটি কানের ভিতর লাল, বাহির কালো, এই রূপ একহাজারটি অতিশয় তেজস্বী ঘোড়া সত্যবতীর বিবাহের পণ। ইহা আনিয়া দিতে পারিলেই আপনি তাহাকে বিবাহ করিতে পাইবেন।”
এইরূপ একহাজারটি ঘোড়া বাজারে খুঁজিয়া পাওয়ার কোন সম্ভাবনা ছিল না; আর থাকিলেও ঋচীক তাহার দাম দিতেন কোথা হইতে? কাজেই রাজা পণের কথা বলিয়া মনে করিয়াছিলেন যে, খুবই কৌশল করা হইয়াছে। কিন্তু ঋচীক অতি সহজ উপায়ে পণের জোগাড় করিয়া ফেলিলেন, তাঁহার টাকার চিন্তাও করিতে হইল না, বাজারে বাজারে ঘুরিতেও হইল না। তিনি বরুণের নিকট গিয়া ঐরূপ একহাজারটি ঘোড়া চাহিবা মাত্র, বরুণ শুধু যে তাহাকে ঘোড়া দিলেন, তাহা নহে, সেই ঘোড়ার পাল তাড়াইয়া দেশে আনার পরিশ্রম হইতেও তাঁহাকে বাচাইয়া দিলেন।
বরুণ বলিলেন, “মুনিঠাকুর, আপনি নিশ্চিন্তে দেশে চলিয়া যাউন। সেখানে গিয়া আপনি ঘোড়ার কথা মনে করিবামাত্র তাহারা আপনার নিকট উপস্থিত হইবে।”
এ কথায় ঋচীকের ত আর আনন্দের সীমাই রহিল না, তিনি দিব্য আরামে ভজন গাহিতে গাহিতে কান্যকুব্জের নিকট গঙ্গার ধারে আসিয়া উপস্থিত হইলেন। সেখানে আসিয়া যেই তিনি ভাবিয়াছেন যে, ‘এখন ঘোড়া গুলি আসিলে হয়,’ অমনি দেখিলেন, তাহারা চী-হিঁ হিঁ-হিঁ শব্দে নাচিতে নাচিতে গঙ্গার ভিতর হইতে উঠিয়া আসিতেছে। গঙ্গার সেই স্থানটির নাম তদবধি অশ্বতীর্থ হইয়া গেল।
সেই একহাজার আশ্চর্য ঘোড়া লইয়া ঋচীক যখন হাসিতে হাসিতে গাধির নিকট উপস্থিত হইলেন, তখন রাজা ত তাহা দেখিয়া একেবারে অবাক! যাহা হউক, এখন আর তাঁহার ঋচীককে ফিরাইয়া দিবার উপায় রহিল না। সুতরাং তিনি অবিলম্বে শুভ দিন দেখিয়া তাঁহার সহিত সত্যবতীর বিবাহ দিলেন!
ঋচীক সত্যবতীকে যেমন ভালবাসিতেন, সত্যবতীও তাঁহাকে তেমনি ভক্তি করিতেন। সুতরাং বিবাহের পর তাঁহাদের দিন অতিশয় সুখেই যাইতে লাগিল। ইহার মধ্যে কি হইল, শুন।
সত্যবতীর পুত্র হয় নাই। তাঁহার মাতারও পুত্র হয় নাই। সকলেরই ইচ্ছা যে, তাঁহাদের দুজনের দুটি পুত্র হয়। এজন্য ঋচীক নিজ হাতে দুই বাটি চরু, অর্থাৎ পায়েস প্রস্তুত করিয়া এক বাটি সত্যবতীকে এবং এক বাটি তাঁহার মাতাকে খাইতে দিলেন।
সত্যবতী সেই চরু হাতে মাতার নিকট গিয়া উপস্থিত হইলেন, রানী বলিলেন, “মা, আমি তোমার স্বামীর চেয়েও তোমার মান্য লোক, কাজেই আমি যাহা বলি, তোমার তাহাই করা উচিত!”