করিতেছিলেন, আর মহর্ষি, সিদ্ধ, অপ্সরা ও গন্ধর্বগণ আশ্চর্য হইয়া বলিতেছিলেন, এই মহাত্মা তপোবলে সিদ্ধি লাভ করিয়াছেন, ইনি কে?
শুকদেব সূর্যের দিকে চাহিয়া গভীর শব্দে আকাশ পরিপূর্ণ করতঃ ক্রমাগত পূর্বদিকে যাইতে লাগিলেন। অপ্সরাগণ তাঁহাকে দেখিয়া জিজ্ঞাসা করিল, ইনি কোন্ দেবতা?’ কেহ বলিল, ‘আহা, ইহার পিতা ইহাকে কতই স্নেহ করেন, তিনি কিরূপে এমন পুত্রকে বিদায় দিলেন?
এ কথায় তখনই শুকদেবের পিতার কথা মনে পড়াতে, তিনি বৃক্ষ, লতা, নদী, পর্বত, সকলকে ডাকিয়া বলিলেন, হে বন্ধুগণ! যদি আমার পিতা আমার জন্য ব্যাকুল হইয়া উচ্চৈঃস্বরে আমাকে ডাকেন, তবে দয়া করিয়া তোমরা তাহার উত্তর দিও।
তাহা শুনিয়া বৃক্ষ, লতা, নদী, পর্বত সকলে বলিল, 'হাঁ শুকদেব, আপনার পিতা আপনাকে ডাকিলেই আমরা উত্তর দিব।'
ক্রমে শুকদেব মেরু ও হিমালয় পর্বতের শত যোজন প্রশস্ত সোনা আর রূপার শৃঙ্গ দুইটির নিকট আসিয়া উপস্থিত হইলেন। পর্বতের চূড়া শুকদেবকে দেখিবামাত্র দুই ভাগে ভাগ হইয়া তাঁহাকে পথ ছাড়িয়া দিল। অমনি চারিদিক হইতে শব্দ উঠিল, 'কি আশ্চর্য!’ ‘কি আশ্চর্য!
এইরূপে শুকদেব ত্রিভুবনের লোককে আশ্চর্য করিযা শেষে ভগবানের সহিত মিলিত হইলেন।
শুকদেব চলিয়া আসিলে ব্যাসের প্রাণ তাঁহার জন্য নিতান্ত ব্যাকুল হইয়া উঠিল। তখন তিনি আর স্থির থাকিতে না পারিয়া শুকদেবকে খুঁজিতে খুঁজিতে সেই পর্বতের নিকট আসিয়া দেখিলেন, তাহারা দুইভাগ হইয়া গিয়াছে। ব্যাসদেবকে দেখিয়া মহর্ষিগণ তাঁহার নিকট আগমন পূর্বক আহ্লাদ এবং বিস্ময়ের সহিত শুকদেবের আশ্চর্য কার্য সকলের কথা কহিতে আরম্ভ কবিলে, ব্যাসদেব, 'হা বৎস!' 'হা, বৎস' বলিয়া চিকার করিতে লাগিলেন। তখন বৃক্ষ, লতা, পর্বত সকলে শুকদেবেব সেই কথা স্মরণ করিয়া ভো!’ শব্দে ব্যাসদেবের কথার উত্তর দিল। সেই অবধি এখনো পর্বত বা নদীর নিকট কথা কহিলে, তাহারা তাহার উত্তর দিয়া পবম ভক্ত শুকদেবের পবিত্র নাম স্মরণ করাইয়া দেয়।
নচিকেতা
অতি প্রাচীনকালে ডদ্দানকি নামে এক মহর্ষি ছিলেন। তাঁহার একটি পুত্র ছিলেন, তাঁহার নাম নচিকেতা।
একদিন মহর্ষি ডদ্দানকি নদীতে স্নান ও তাহার তীরে সাধন ভজন শেষ করিয়া, আনমনে কুটিরে চলিয়া আসিলেন, সঙ্গে কাঠ, কলসী, ফুল আর ফল ছিল, তাহা লইয়া আসিবার কথা তাঁহার মনে হইল না।
বাড়ি আসিয়া সেইসকল দ্রব্যের কথা মনে পড়াতে মহর্ষি নচিকেতাকে ডাকিয়া বলিলেন, “বৎস, আমি বেদপাঠ করিতে করিতে অন্যমনস্ক হইয়া পূজা আর রন্ধনের আয়োজন নদীর তীরে ফেলিয়া আসিয়াছি তুমি গিয়া শীঘ্র তাহা লইয়া আইস।”