সকল স্থান যে কি সুন্দর আর তাহাতে বাস করিতে যে কি আরাম, তাহা যাহারা সেখানে গিয়াছে, আর তথায় বাস করিয়া দেখিয়াছে, তাহারাই বলিতে পারে। নচিকেতা দেখিলেন, সেখানে মিষ্টান্নের পর্বত, দুগ্ধের নদী ও ঘৃতের হ্রদ আছে। সেখানকার যে বাড়ি ঘর, সেসকল চন্দ্র, সূর্যের ন্যায় উজ্জল; আর তাহাতে ঘরের কাজও চলে, গাড়ির কাজও চলে, বেলুনের কাজও চলে, জাহাজের কাজও চলে। |
নচিকেতা এই-সকল আশ্চর্য স্থান দেখিয়া যেমন আনন্দ লাভ করিলেন, যমের সুন্দর উপদেশ শুনিয়া তেমনি উপকারও পাইলেন। তারপর বিনীতভাবে যমকে নমস্কার পূর্বক তিনি তাঁহার নিকট বিদায় প্রার্থনা করিলে, যমের লোকেরা তাঁহাকে আদরের সহিত মহর্ষি উদ্দানকির আশ্রমে রাখিয়া গেল।
এদিকে মহর্ষি উদ্দানকি পুত্রশোকে নিতান্ত কাতর হইয়া সমস্ত দিন এবং সমস্ত রাত্রি কাঁদিয়াই কাটাইলেন। তাঁহার চক্ষের জলে নচিকেতার দেহ ভিজিয়া গেল, তথাপি তিনি শান্ত হইতে পারিলেন না। রাত্রি প্রভাত হইয়া আসিল; তখনো নচিকেতার দেহ তাঁহার কোলে, তাঁহার চোখ দিয়া দরদর ধারে জল পড়িতেছে। এমন সময় কি এক অপরূপ সৌরভে কুটির পরিপুণ্য হইয়া গেল, আর, মহর্ষির মনে হইল, যেন নচিকেতার হ'ত পা অল্প অল্প নড়িতেছে। তাহার পর মুহূর্তেই নচিকেতা উঠিয়া বসিলেন। তখন মহর্ষির মনে এত আনন্দ হইল যে, তিনি আর আশ্চর্ণ হইবার অবসর পাইলেন না।
ইহার পরে বোধহয় আর তিনি নচিকেতাকে সহজে কটু কথা কহিতেন না। আর এই ঘটনার দরুণ যে নচিকেতার মনে তাঁহার পিতার প্রতি কিছুমাত্র রাগ হয় নাই, তাহাও আমি নিশ্চয় বলিতে পারি। তিনি বলিতেন যে, বাবা আমাকে শাপ দিয়াছিলেন বলিয়াই আমি এমন সকল আশ্চর্য ব্যাপার দেখিতে পাইয়াছি।
শঙ্খ ও লিখিত
বহুকাল পূর্বে শঙ্খ ও লিখিত নামে দুটি ভাই, বাহুদা নদীর তীরে নিজ নিজ আশ্রমে থাকিয়া তপস্যা করিতেন।
একদিন শঙ্খ কোন কারণে আশ্রমের বাহিরে গিয়াছে, এমন সময়ে লিখিত তথায় আসিয়া উপস্থিত হইলেন। শঙ্খকে আশ্রমে না পাইয়া, লিখিত এদিক-ওদিক বেড়াইতে বেড়াইতে দেখিলেন আশ্রমের একটি গাছে অতি চমৎকার ফল পাকিয়া রহিয়াছে। বোধহয় তখন লিখিতের খুব ক্ষুধা হইয়াছিল, তাই ফল দেখিবামাত্রই তিনি ভাবিলেন, ইহার কয়েকটি পাড়িয়া খাই। এই মনে করিয়া তিনি কয়েকটি ফল পাড়িয়া আনন্দের সহিত ভক্ষণ করিতে লাগিলেন, ঠিক সেই সময়ে শঙ্খও আশ্রমে আসি!’ উপস্থিত হইলেন।
লিখিতকে ফল খাইতে দেখিয়া শঙ্খ জিজ্ঞাসা করিলেন, ভাই, তুমি এসকল ফল কোথায় পাইলে?
এ কথায় লিখিত তাঁকে প্রণাম করিয়া হাসিতে হাসিতে বলিলেন, “দাদা, এসকল ফল আপনারই আশ্রমের গাছ হইতে পাড়িয়া লইয়াছি।