পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৬১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬১২
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

 যাইতেছি, তথাপি তোমার কিছুমাত্র রাগ হইতেছে না, কি আশ্চর্য! আমার পরম ভাগ্য যে এমন মহাপুরুষের সহিত আমার পরিচয় হইল। দেবতারাও তোমার সাধুতায় পরম সন্তুষ্ট হইয়াছে, তুমি শীঘ্রই সশরীরে স্বর্গে যাইবে।”

 দুর্বাসার কথা শেষ হইতে না হইতেই দেবদূত হংস-সারসে টানা বিচিত্র রথ সমেত মুদগলের নিকট উপস্থিত হইয়া বলিল, “মহর্ষি, আপনার সিদ্ধি লাভ হইয়াছে, এখন এই রথে চড়িয়া স্বর্গে চলুন।”

 দেবদূতের কথা শুনিয়া মুদগল বলিলেন, “দেবদূত, স্বর্গবাসের কিরূপ গুণ এবং তাহার দোষই বা কিরূপ, তুমি তাহার বর্ণনা কর! তোমার কথা শুনিয়া আমি যা করিতে হয়। করিব।”

 দেবদূত বলিলেন, “স্বর্গ এখান হইতে অনেক উচ্চ। দেবতাগণ নানারূপ রথে চড়িয়া সেখানে বিচরণ করেন। যাহারা তপস্যা করে না, যাহারা ধর্মকে অবহেলা করে, যাহারা মিথ্যা কথা কহে আর যাহার নাস্তিক, সে-সকল লোকক কখনো স্বর্গে যাইতে পাবে না। কেবল ধার্মিকেরাই স্বর্গে গিয়া থাকেন। মেরু নামক তেত্রিশ যোজন বিস্তৃত সোনার পর্বতের উপরে দেবতাদিগের অতি আশ্চর্য এবং সুন্দর উদ্যান সকল আছে, পুণ্যবাণ লোকেরা স্বর্গে গিয়া সেই সকল উদ্যানে বিহার করেন। তথায় ক্ষুধা পিপাসা, ক্লেশ, ভয়, শোক, তাপ, ক্লান্তি প্রভৃতি কোন অসুখই নাই। পরম পবিত্র নির্মল সুশীতল বায়ু সর্বদাই সেখানে ধীরে ধীরে প্রবাহিত থাকে, আর নানারূপ সুমধুর শব্দে প্রাণ মন মোহিত হয়। সেই ধূলা ও দুর্গন্ধ শূন্য পরম সুন্দর পবিত্র স্থানে পুণ্যবানেরা, উজ্জল মূর্তি ধারণ পূর্বক রথে চড়িয়া বিচরণ কবেন। তাঁহাদের মনে কদাচ হিংসা, মোহ প্রভৃতি নিকৃষ্ট ভাব আসে না। তাঁহাদের সুগন্ধি পুষ্পমাল্য কল কখনো মলিন হয় না।”


 "স্বর্গ বাসের এইরূপ শুণ। উহার দোষ এই যে, সেখানে গিয়া কেবল সুখই ভোগ করিতে হয়, ধর্ম কর্মের দ্বারা অধিক পুণ্য সঞ্চয় করিবার অবসব থাকে না। সুতরাং পূর্বের পুণ্য শেষ হইলে আবার পৃথিবীতে ফিরিয়া আসিতে হয়।”

 মুদগল বলিলেন, “আমি কেবল ভগবানকেই চাহি, স্বগে বা সুখে আমার প্রয়োজন নাই। তোমার রথ লইয়া তুমি ফিরিয়া যাও।” এই বলিয়া দেবদূতকে বিদায় পূর্বক মহর্ষি মুদগল ভগবানের চিন্তায় মন দিলেন, এবং শেষে তাঁহাকে লাভ করিয়া কৃতার্থ হইলেন।


ইন্দ্র ও নহুষ

 পূর্বকালে ত্বষ্টা নামক প্রজাপতির সহিত ইন্দ্রের শত্রুতা হইয়াছিল। সে সময়ে ত্বষ্টা তাহার ব্রিশিরা নামক পুত্রকে ইন্দ্রের অনিষ্ট করিবার জন্য নিযুক্ত করেন। ত্বষ্টার পুত্রটি নিতান্তই অত রকমের ছিলেন। ত্রিশিরা কি না যাঁহার তিনটা মাথা। তিন মুখের এক মুখ দিয়া তিনি বেদপাঠ করিতেন, আর-এক মুখে মদ্যপান করিতেন, আর-একখানি মুখ তাঁহার এমনি ভয়ানক ছিল যে, তাহা দেখিলেই মনে হইত, যেন তিনি ঐ মুখখানি দিয়া ত্রিভুবন গিলিয়া খাইবেন।