পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৬১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মহাভারতের কথা
৬১৫

সন্ধ্যাকাল দিবাও নহে রাত্রিও নহে, আর এই ফেনা শুকনোও নহে ভিজাও নহে, পাথরও নহে কাঠও নহে, অস্ত্রও নহে শস্ত্রও নহে। সুতরাং এই সন্ধ্যাকালে এই ফেনা দিয়া বৃত্রকে বধ করিতে হইবে।

 তারপর ইন্দ্র সন্ধ্যাকালে ফেনার আঘাতে বৃত্রকে বধ করিলেন। এতবড় অসুরটা ফেনার আঘাতে মরিয়া গেল, এ কথা নিতান্তই আশ্চর্য বোধ হইতে পারে, কিন্তু সেই ফেনার ভিতরে যে ইন্দ্রের বস্ত্রখানি লুকান ছিল, এ সংবাদটি শুনিলে আর কাহারো আশ্চর্য হইবার কারণ থকিবে না।

 বৃত্র মরিয়া গেল, দেবতাগণের আপদ দুর হইল। কিন্তু ইন্দ্রের মন ইহাতেও নিশ্চিন্ত হইতে পারিল না। ইহার কারণ এই যে, পাপ করিলে ইন্দ্রকেও ত তাহার ফলভোগ করিতে হয়। পূর্বে ত্রিশিরাকে মারিয়া এক মহাপাপ করিয়াছিলেন, এখন বৃত্রের সহিত বিশ্বাসঘাতকতা করাতে আব এক মহাপাপ হইল। না জানি এ-সকল পাপের কি ভয়ঙ্কর শাস্তি হইবে! এই চিন্তায় অস্থির হইয়া ইন্দ্র স্বর্গের রাজত্ব পরিত্যাগপূর্বক জগতের শেষে যে জল আছে, সেই জলের ভিতরে গিয়া লুকাইয়া রহিলেন।

 এদিকে ইন্দ্র চলিয়া যাওয়াতে সংসারময় হাহাকার উপস্থিত হইল। বৃষ্টি নাই, পৃথিবীতে জল নাই, গাছপালা মরিয়া গিয়াছে, জীব-জন্তুর আহার মিলে না। দেবতারা দেখিলেন, সৃষ্টি আর থাকে না, অবিলম্বে একজন ইন্দ্র ঠিক না করিলে সকলই মাটি হয়। অনেক চিন্তা করিয়া তাঁহারা সংসারে মধ্যে একটিমাত্র লোককে ইন্দ্র হইবার উপযুক্ত বলিয়া স্থির করিলেন। সেই লোকটি রাজা নহুষ। যশে, মানে তেজে, ধর্মে নিতান্তই সম্পূর্ণরূপে ইন্দ্র হইবার উপযুক্ত লোক।

 সুতরাং দেবতা, ঋষি, এবং পিতৃগণ সকলে মিলিয়া নহুষের নিকট গমন পূর্বক বলিলেন, “হে মহারাজ! আপনি দেবরাজ্যের ভাব গ্রহণ করুন।”

 নহুষ বলিলেন, “আমি নিতান্ত দুর্বল, আমি কি করিয়া স্বর্গে রাজত্ব করিব?”

 দেবতারা বলিলেন, “আপনার কোন চিন্তা নাই, আপনি যাহার পানে তাকাইবেন, তাহারই বল রূণ করিতে পারিবেন।”

 তখন নহুষ দেবতাদিগের কথায় সম্মত হইয়া স্বর্গে রাজত্ব করিতে লাগিলেন। কিছুকাল তিনি খুব ভালো করিয়াই রাজত্ব করিয়াছিলেন। কিন্তু হায়! মানুষ হইয়া হঠাৎ এমন উচ্চপদ লাভ করাতে, শেষে বেচারার মাথা ঘুরিয়া গেল।

 একদিন তিনি সভায় বসিয়া বলিলেন, “হে সভাসদগণ! আমি ত ইন্দ্র হইয়াছি তবে শচী কেন আসিয়া আমার পদসেবা করে না?”

 নহুষ আসিবার পূর্বে শচী ছিলেন স্বর্গের রাণী। নহুষের মুখে এই অপমানের কথা শুনিয়া তিনি ভয়ে এবং দুঃখে নিতান্তই কাতর হইলেন’ এসময়ে বৃহস্পতি তাঁহাকে সাহস দিয়া বলিলেন, “মা। তোমার কোন ভয় নাই, শীঘ্রই আমাদের ইন্দ্র স্বর্গে ফিরিয়া আসিবেন।”

 এদিকে নহুষ নিতান্তই প্রতিজ্ঞা করিয়া বসিয়া আছে, শচীকে আসিয়া তাঁহার পদসেবা করিতেই হইবে। অনেক কষ্টে তাঁহাকে দুই-চারি দিনের জন্য থামাইয়া রাখিয়া সকলে ইন্দ্রকে ফিরাইয়া আনিবার জন্য বিষ্ণুর নিকট পরামর্শ লইতে গেলেন। বিষ্ণু তাঁহাদের কথা শুনিয়া বলিলেন, “হে দেবতাগণ! তোমরা চিন্তিত হইও না। ইন্দ্র অশ্বমেধ যজ্ঞ করিলেই তাঁহার