পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৬১৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মহাভারতের কথা
৬১৭

পাল্কিতে উঠিয়া নহুষ ভাবিলেন যে, এমন আমোদ আর তিনি কখনো ভোগ করেন নাই। সেই সকল মুনির মধ্যে একজন ছিলেন অগস্ত্য। তিনি যে কিরূপ অদ্ভুত লোক, তাহা ত জানই। নহুষ আহ্লাদে অধীর হইয়া সেই অগস্ত্যর মাথায় পা তুলিয়া দিলেন! অমনি আর তিনি যাইবেন কোথায়? তখনই অগস্ত্যের শাপে তাঁহাকে অজগর হইয়া পৃথিবীতে পড়িতে হইল, দেবতাদিগেরও আপদ কাটিয়া গেল।

 তোমরা নিশ্চয়ই বুঝিতে পারিয়াছ যে, এই অজগরের সঙ্গেই একবার পাণ্ডবদিগের দেখা হইয়াছিল। তখন সে ভীমকে ধরিয়া গিলিবার আয়োজন করে, আর যুধিষ্ঠির আসিয়া তাঁহাকে বাঁচাইয়া দেন। সে ঘটনা উপস্থিত ঘটনার দশ হাজার বৎসর পরে হইয়াছিল।

 এইরূপে নহুষের অত্যাচার দূর হইল। তারপর যে ইন্দ্র স্বর্গে ফিরিয়া আসিলেন, আর দেবতাগণের তাহাতে খুব আনন্দ হইল, এ কথা আর বিশেষ করিয়া বলার কোন প্রয়োজন দেখি না।


সোমক ও তাঁহার ঋত্বিক

 বহুকাল পর্বে সোমক নামে এক রাজা ছিলেন।

 সোমকের একশত রানী ছিলেন, কিন্তু তাঁহার একটিও পুত্র ছিল না। এজন্য তিনি সর্বদাই অতিশয় দুঃখিত থাকিতেন। এইরূপে অনেক বৎসর গত হইলে, ভগবানের কৃপায় বৃদ্ধ বয়সে রাজার জন্তু নামে একটি পুত্র হইল। এত কষ্টের পরে পুত্রটিকে পাইয়া রাজা এবং রানীগণেব কিরূপ আনন্দ হইল, আব তাহারা কিরূপ স্নেহের সহিত তাহার লালন পালন করিতে লাগিলেন, তাহা লিখিয়া কত জানাইব? ছেলেটিকে বারবার অনিমেষ চক্ষে দেখিয়াও রানীদিগের তৃপ্তি হয় না, তাঁহার আহার নিদ্রা ভুলিয়া দিন রাত কেবল তাহাকে ঘিরিয়া বসিয়া ধকিতেন।

 এমন করিয়া দিন যায়, ইহার মধ্যে কি হইল শুন। হীরা-মতির ঝালর দেওয়া সোনার খাটে মাখনের মত কোমল শয্যায়, জন্তু সুখে নিদ্রা যাইতেছিল, এমন সময় কোথা হইতে এক পাপিষ্ঠ পিপীলিকা আসিয়া তাহার কোমরে কামড়াইয়া দিল। খোকা তখনই পিঠ বাঁকাইয়া, মুখ সিটকাইয়া, বিষম ভূকুটি পূর্বক চিৎকার করিয়া উঠিল। তাহাতে খোকার সেই একশত মাতা সকলে মিলিয়া বুক চাপড়াইয়া, হাত পা ছুড়িয়া, উচ্চৈঃস্বরে কাঁদিতে আরম্ভ করিলেন।

 সেকালের মেয়েরা কিরকম সুরে বিলাপ করিত জানি না। কিন্তু সেই একশত রানীর চিৎকার মিলিয়া যে খুবই ভয়ানক একটা গোলমাল হইয়াছিল, তাহাতে সন্দেহ নাই। মহারাজ সোমক তখন ঋত্বিক (যজ্ঞের পুরোহিত) ও পাত্রমিত্র লইয়া সভায় বসিয়াছিলেন, রানীদের কান্নার শব্দ প্রলয়ের ঝড়ের ভয়ঙ্কর গর্জনের ন্যায়, সেই সভায় আসিয়া উপস্থিত হইল। রাজা তাহাতে নিতান্ত ব্যস্ত হইয়া দবোয়ানকে বলিলেন, “শীঘ্র দেখ, কি হইয়াছে।” দরোয়ান উর্দ্ধশ্বাসে ছুটিয়া অন্তঃপুর হইতে সংবাদ আনিল, “খোকা মহারাজের না জানি কি ভয়ানক কি হইয়াছে।”

 তখন রাজা ছুটলেন, মন্ত্রী ছুটিলেন, ঋত্বিক ছুটিলেন, পাত্রমিত্র সকলেই পাগড়ি ফেলিয়া

উপেন্দ্র-৭৮