পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৬১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মহাভারতের কথা
৬১৯

নরকে পতিত হইয়াছে। সুতরাং আপনি দয়া করিয়া ইঁহাকে ছাড়িয়া দিন, ইঁহার পরিবর্তে আমি নিজে এই নরকে প্রবেশ করিতেছি।”

 যম কহিলেন, “মহারাজ। একজনের কর্মের ফল অন্যে ভোগ করিতে পারে না। তুমি সৎকার্য করিয়াছ, তাহার ফল-স্বরূপ তুমি পবিত্র লোক স্থান সকল ভোগ করিবে।”

 রাজা কহিলেন, “ইঁহাকে ছাড়িয়া আমি পবিত্র লোক ভোগ করিতে চাহিনা। স্বর্গেই হউক আর নরকেই হউক, আমি ইঁহার সঙ্গে থাকিব। আমাদের দুজনেরই সমান কাজ, তাহার ফলও সমান হউক।”

 যম বলিলেন, “তথাস্তু! তবে তোমরা উভয়ে কিছুকাল নরক ভোগ কর, তারপর উভয়ে স্বর্গে গিয়া সুখে বাস করিবে।”

 ইহাতে সোমক অতিশয় সন্তুষ্ট হইয়া সেই নরকে প্রবেশ পূর্বক তাঁহার প্রিয় পুরোহিতের সহিত বাস করিতে লাগিলেন। অল্পকালের মধ্যেই তাঁহাদের সকল পাপ ক্ষয় হইয়া গেল। তারপর উভয়ে স্বর্গে গিয়া সেখানকার সকল সুখের অধিকারী হইলেন।


উশীনরের পরীক্ষা

 শিবিবংশীয় মহারাজ উশীনরের কথা অতি পবিত্র। যতদিন এই পৃথিবীতে পুণ্যবানের সম্মান থাকিবে, ততদিন লোকে মহারাজ উশীনরকে ভক্তি করিবে।

 মহারাজ উশীনর যেমন যজ্ঞ করিয়াছিলেন, দেবরাজ ইন্দ্রও তেমন করিতে পারেন নাই।

 একদিন ইন্দ্র অগ্নিকে বলিলেন, “উশীনর যে কেমন ধার্মিক, তাহা পরীক্ষা করিয়া দেখিতে হইবে।”

 এইরূপ পরামর্শ করিয়া ইন্দ্র শ্যেন (শাঁচান) আর অগ্নি কপোতের (পায়রার)বেশে উশীনরের যজ্ঞ ভূমিতে আসিয়া উপস্থিত হইলেন।

 মহারাজ উশীনর যজ্ঞ করিতেছেন, এমন সময় শ্যেন পাখির তাড়ায় অত্যন্ত ভয় পাইয়া, কপোতটি তাঁহার কোলে আসিয়া আশ্রয় লইল।

 তখন শ্যেন রাজাকে বলিল, “মহারাজ, আমার অত্যন্ত ক্ষুধা হইয়াছে। আপনি কপোতটিকে ছাড়িয়া দিন, আমি ভক্ষণ করিব।”

 রাজা বলিলেন, “তাহা কি করিয়া হয়? এই কপোত প্রাণের ভয়ে পলায়ন করিয়া আমার নিকট আশ্রয় লইয়াছে, এখন ইহাকে পরিত্যাগ করা নিতান্ত অন্যায়! ব্রহ্মহত্যা আর গোহত্যার যেমন পাপ, আশ্রিতকে পরিত্যাগ করিতে তেমনি পাপ।”

 শ্যেন বলিলেন, “মহারাজ, আহার করিয়াই প্রাণিগণ জীবিত থাকে! না খাইতে পাইলে আমি মরিয়া যাইব, আমার মৃত্যু হইলে আমার স্ত্রী পুত্র পরিবার সকলেই বিনাশ পাইবে। আপনি একটি প্রাণীকে বাঁচাইতে গিয়া এতগুলি প্রাণীর মৃত্যু ঘটাইতেছেন, ইহা কি উচিত?”

 রাজা কহিলেন, “তোমার ত ভোজনই প্রয়োজন, এই কপোতকে বধ না করিয়াও তাহা তোমার স্বচ্ছন্দে জুটিতে পারে। গরু, মহিষ, শুয়োর, যাহা খাইতে তোমার ইচ্ছা হয়, এখনই