নিন।”
চ্যবন বলিলেন, “বাছাসকল! দরিদ্রের মনে দুঃখ দেওয়া মহাপাপ, সুতরাং আমি কখনো তোমাদের কথা অমান্য করিব না। আমি তোমাদের গাভী গ্রহণ করিলাম। এখন তোমরা এই সকল মৎস্যের সহিত স্বর্গে চলিয়া যাও।”
এই বলিয়া চ্যবন জেলেদের নিকট হইতে গাভীটি গ্রহণ পূর্বক রাজাকে আশীর্বাদ করিয়া, সেই তপস্বীর সঙ্গে তথা হইতে চলিয়া গেলেন।
একলব্যের গুরুদক্ষিণা
মহর্ষি ভরদ্বাজের পুত্র মহাবীর দ্রোণাচার্য কৌরব এবং পাণ্ডব রাজপুত্রদিগকে ধনুর্বিদ্যা শিক্ষা দিতেন। তাঁহার যশে ত্রিভুবন ছাইয়া গিয়াছিল। দেশ-বিদেশের সকল রাজপুত্রেরা আসিয়া তাঁহার শিষ্য হইয়াছিলেন। একদিন নিষাদরাজ হিরণ্যধনুর পুত্র একলব্য আসিয়া, ভুমিতে লুটাইয়া অতি বিনীতভাবে তাঁহাকে প্রণাম পূর্বক করজোড়ে তাঁহার সম্মুখে দাঁড়াইল।
দ্রোণ সেই বালকের বলিষ্ঠ দেহ এবং সকল উজ্জ্বল মুখশ্রীর প্রতি দৃষ্টিপাত করিয়া বিস্ময়ের সহিত জিজ্ঞাসা করিলেন, “তুমি কে বৎস? কাহার পুত্র?কি জন্য আসিয়াছ?”
একলব্য মাথা হেঁট করিয়া জোড়হাতে বলিল, “ভগবন! আমার নাম একলব্য, পিতার নাম হিরণ্যধনু, জাতিতে নিষাদ। দয়া করিয়া আমাকে শিষ্য করিলে, আপনার চরণ সেবা করিয়া কৃতার্থ হইব।”
একলব্যের মুখের দিকে চাহিয়া দ্রোণের মনে যে স্নেহের সঞ্চার হইয়াছিল, তাহার পরিচয় শুনিবামাত্র তাহা শুকাইয়া গেল, নিষাদের পুত্র ম্লেচ্ছ জাতি, তাহকে স্পর্শ করিলেও পাপ হয়। তাহাকে কি কখনো শিষ্য করা যাইতে পারে, না সকলের সঙ্গে সমানভাবে মিশিতে দেওয়া যাইতে পারে? দ্রোণ তাহাকে অবজ্ঞার সহিত বলিলেন, “তুমি ম্লেচ্ছের পুত্র, তুমি কি সাহসে আমার শিষ্য হইতে আসিয়াছ?”
একলব্য অনেক আশা করিয়া আসিয়াছিল, দ্রোণের এক কথায় তাহার সকল আশা চূর্ণ হইয়া গেল। কিন্তু তথাপি তাঁহার প্রতি তাহার ভক্তি কিছুমাত্র হ্রাস হইল না। তাঁহার ঐ কথার পর সে আর তাঁহাকে কিছু বলিলও না। সে নীরবে তাঁহার পায়ের ধূলা লইয়া, ধীরে ধীরে সেখান হইতে চলিয়া আসিল।
একলব্য এখন কোথায় যাইবে? দেশে ফিরিবে? না, দেশে যাইবার যে পথ, সে পথে ত সে গেল না, সে যে অন্য পথে বনের দিকে চলিয়াছে। বাস্তবিক সে বনে যাওয়াই স্থির করিয়াছে। ম্লেচ্ছের পুত্র হইলেও সে সাধারণ লোক নহে, যাহা শিখিতে আসিয়াছিল, তাহা না শিখিয়া কখনই সে দেশে ফিরিবে না। দেশ হইতে যাত্রা করিবার সময়ই সে মনে মনে দ্রোণকে শুরু করিয়া আসিয়াছিল। তিনি তাহাকে তাড়াইয়া দিয়াছেন, তাহাতে কি? তথাপি তিনিই তাহার গুরু। যে বিদ্যা তিনি ইচ্ছা পূর্বক দান করিলেন না, ভগবানের কৃপা হইলে, তপস্যা করিয়া সে সেই বিদ্যা তাঁহার নিকট হইতে আদায় করিবে।
এই মনে করিয়া সে বনের ভিতরে আসিয়া মৃত্তিকা দ্বারা দ্রোণের এক মূর্তি প্রস্তুত