পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৬২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬২৮
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

বসিবার জন্য আসন দিয়া, জোড়হাতে তাঁহার সম্মুখে দাড়াঁইয়া রহিল।

 তখন দ্রোণ বলিলেন, “হে বীর, যদি তুমি সত্য-সত্যই আমার শিষ্য হও, তবে আমার দক্ষিণা দাও।”

 এ কথায় একলব্য যার পর নাই আনন্দিত হইয়া বলিল, “গুরুদেব, কিরূপ দক্ষিণা দিতে হইবে, অনুমতি করুন, আমি তাহা আনিয়া দিতেছি।”

 দ্রোণ বলিলেন, “তোমার ডান হাতের বুড়ো আঙুলটি কাটিয়া আমাকে দাও, উহাই আমার দক্ষিণা।”

 একলব্য তখনই হাসিতে হাসিতে তাহার ডান হাতের বুড়ো আঙুলটি কাটিয়া দ্রোণকে দিল। এমন নিষ্ঠুর ব্যবহারের পরও এমন বোধ হইল না যে, দ্রোণের প্রতি তাহার ভক্তি কিছুমাত্র কমিয়াছে।

 অঙ্গুষ্ঠ গেল, সুতরাং একলব্যের আর তেমন আশ্চর্য রূপ তীর ছুঁড়িবার ক্ষমতা রহিল না, ইহাতে দ্রোণাচার্য এবং তাঁর শিষ্যগণ অতিশয় আনন্দিত হইয়া সেখান হইতে চলিয়া গেলেন। তখন একলব্যও এই সকল কথা ভাবিয়া একটি দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলিলেন।


কুশিকের সহিষ্ণুতা

 কান্যকুব্জের রাজা গাধির পুত্র বিশ্বামিত্র, ক্ষত্রিয় হইয়াও নিজের অসাধারণ তপস্যার বলে ব্রাহ্মণ হইয়াছিলেন। বিশ্বামিত্র যে ব্রাহ্মণ হইবেন, এ কথা তাঁহার জন্মের অনেক পুর্ব হইতেই জানা ছিল। ক্ষত্রিয়েরা এইরূপে ব্রাহ্মণ হয়, ব্রাহ্মণদিগের এরূপ ইচ্ছা হয়ত একেবারেই ছিল না। এমন কি, মহর্ষি চ্যবন প্রথমে একথা ব্রহ্মার নিকট শুনিতে পাইয়া, যে বংশে বিশ্বামিত্রের জন্মগ্রহণ করিবার কথা ছিল, সেই বংশটাকেই নাশ করিবার জন্য বিধি মতে চেষ্টা করেন।

 তখন বিশ্বামিত্রের পিতামহ মহারাজ কুশিক কান্যকুজের রাজা ছিলেন। চ্যবন মনে করিলেন, এই কুশিককে কোন সুযোগে শাপ দিয়া বংশকে ভস্ম করিতে হইবে। আমি উহার সঙ্গে বাস করিয়া নানারূপে উহাকে কষ্ট দিব। তাহা হইলে অবশ্য উহার রাগ হইবে। তখন সে আমাকে কিছুমাত্র অসম্মান করিলেই, আমি উহাকে শাপ দিব। তাই তিনি একদিন কুশিকের নিকট গিয়া বলিলেন, “মহারাজ। আমি তোমার সহিত কিছুকাল বাস করিব।”

 রাজা তাঁহার কথায় সম্মত হইয়া, নিজ হাতে তাঁহার পদ প্রক্ষালন পূর্বক অতিশয় বিনয় ও সমাদরের সহিত বলিলেন, “ভগবন, অনুমতি করুন, এখন কি করিতে হইবে।”

 মুনি বলিলেন, “আর কিছুই করিতে হইবে না, আমি একটি ব্রত করিব, সেই ব্রত শেষ না হওয়া পর্যন্ত, তুমি এবং তোমার রানী সর্বদা আমার সঙ্গে সঙ্গে থাকিয়া আমার সেবা কর।”

 রাজা ও রানী আহ্লাদের সহিত তখনই তাঁহার সেবায় নিযুক্ত হইলেন। সন্ধ্যা হইবামাত্র মুনিঠাকুর রাজার গৃহের সমস্ত অন্ন, ব্যঞ্জন, পায়স এবং মিষ্টান্ন নিঃশেষ পূর্বক, অতি পরিপাটি রূপে আহার করিয়া বলিলেন, “আমি নিদ্রা যাইব, যতক্ষণ আমি নিদ্রিত থাকি, ক্রমাগত আমার সেবা কর, দেখিও, আমার ঘুম ভাঙে না যেন।”