জন্য রাশি রাশি ধন, রত্ন, হাতি, ঘোড়া, ছাগ, মেষ, প্রভৃতি লইয়া সঙ্গে চলিল। তখন মুনি অতি নির্দয় ভাবে সেই তীক্ষ্ম প্রতোদ দিয়া, রাজা রানীর শরীরে খোঁচা মারিতে আরম্ভ করিলেন। নগরের লোক সে দৃশ্য সহ্য করিতে না পারিয়া হাহাকার করিতে লাগিল, কিন্তু রাজার তাহাতেও রাগ হইল না। তারপর মুনি তাঁহার ধনরত্ন সমুদায়ই দান করিয়া ফেলিলেন। কিন্তু এত অত্যাচারেও যাঁহার রাগ হয় নাই সামান্য ধনের ক্ষতিতে তাঁহার কি হইবে মুনি পরাস্ত হইয়া গেলেন। ইহার পর রাজার অনিষ্টের চেষ্টা তাঁহাকে ছাড়িয়া দিতে হইল।
তখন তিনি নিতান্ত সন্তুষ্ট হইয়া, রাজার নিকট সকল বৃত্তান্ত প্রকাশ পূর্বক বলিলেন, “মহারাজ! বর লও!”
রাজা বিনয়ের সহিত বলিলেন, “মুনি ঠাকুর! আমি যে সবংশে নষ্ট হই নাই, ইহাই আমার যথেষ্ট বর, আর বর লইয়া কি করিব? আপনি আমার ক্রটি পাইলেই আমাকে ভস্ম করিতেন। এত ঘটনার ভিতরেও যে আমার কোন ত্রুটি হয় নাই, ইহা আমার বিশেষ সৌভাগ্য।”
নৃগের পাপ
দ্বারকা নগরের নিকটে যদুকুলের বালকগণ খেলা করিতেছিল। অনেকক্ষণ খেলা করিয়া তাহাদের অত্যন্ত পিপাসা হওয়ায়, তাহারা জল খুঁজিতে খুঁজিতে একটা প্রকাণ্ড পুরাতন কূয়ার নিকট আসিয়া উপস্থিত হইল। সে যে কত কালের পুরানো কূয়া, তাহা কেহই ঠিক করিয়া বলিতে পারে না। তাহার মুখ লতা-পাতায় আচ্ছন্ন হইয়া গিয়াছে, দেখিলে হঠাৎ তাহাকে কূয়ার মুখ বলিয়া চিনিতেই পারা যায় না। যাহা হউক, বালকেরা সেই কূয়া দেখিতে পাইয়া বড়ই আহ্লাদিত হইল, এবং উৎসারে সহিত তাহা হইতে জল তুলিতে গেল। কিন্তু তাহারা অনেকে চেষ্টা করিয়াও জল তুলিতে পারিল না। তাহাদের মনে হইল, যেন কোন একটা প্রকাণ্ড জিনিস সেই কূয়ার মুখ আটকাইয়া রহিয়াছে। তখন তাহারা বলিল যে, জল খাইতে পাই আর না পাই, কুয়ার মুখ কিসে বন্ধ হইল, তাহা দেখিতে হইব।
এই বলিয়া তাহারা অনেক কষ্টে গাছপালা কাটিয়া কূয়ার মুখ পরিষ্কার করিবামাত্র দেখিতে পাইল যে, এক পর্বত প্রমাণ কৃকলাশ (গিরগিটি) কুয়ার ভিতর হইতে তাহাদের পানে মিট্মিট্ করিয়া তাকাইতেছে। যদুকুলের বালকেরা বিলক্ষণ সাহসী ছিল বলিতে হইবে। সেই বিশাল এবং ভীষণ গিরগিটিকে দিখিয়া চিৎকার বা উর্দ্ধশ্বাসে পলায়ন, ইহার কিছুই তাহারা করিল না বরং তখনই তাহারা ‘আন্ দড়ি!’ ‘আন্ আঁকষি!’ ‘আন্ দোয়ালি!’ বলিয়া মহা উৎসাহের সহিত তাহাকে কূয়া হইতে উঠাইবার আয়োজন করিল।
কিন্তু সে কি সহজ গিরগিটি? বালকদের টানাটানিই সার হইল, গিরগিটি কিছুতেই সেখান হইতে নড়িল না।
ইহাতে বালকগণ অতিশয় অপ্রস্তুত হইয়া কৃষ্ণের নিকট গিয়া বলিল, “মহারাজ। একটা ভয়ঙ্কর কৃকলাশ এক বিশাল কূপের মুখ জুড়িয়া বসিয়া আছে। আমরা প্রাণপণে টানাটানি করিয়াও তাহাকে উঠাইতে পারিলাম না!”
কৃষ্ণ বলিলেন, “বটে। তোমরা সকলে মিলিয়া একটা কৃকলাশকে টানিয়া তুলিতে পারিলে