করিতেছ? বালক পূর্বজন্মে যেমন কাজ করিয়াছে, এ জন্মে তেমন ফল পাইয়াছে, সুতরাং দোষ আর কাহারো নহে। দোষ সেই বালকের নিজেরই!”
তখন গৌতমী বলিলেন, “অর্জুন, আমার পুত্র তাহার কর্মদোষেই প্রাণত্যাগ করিয়াছে, আর আমিও আমার কর্ম দোষেই এই শোক পাইয়াছি। তাই বলি বাছা, এই সর্পকে ছাড়িয়া দিয়া নিজের ঘরে যাও।”
এ কথায় ব্যাধ সর্পকে ছাড়িয়া দিল। মৃত্যু এবং কাল নিজ নিজ স্থানে চলিয়া গেলেন। গৌতমীও ভগবানের চিন্তায় মন দিয়া পুত্রশোক নিবারণ করিলেন।
ধূর্ত শিয়াল
এক যে ছিল শিয়াল, তার ছিল চারিজন বন্ধু। এক বন্ধু বাঘ, এক বন্ধু ইঁদুর, এক বন্ধু বৃক (হুড়ার), আর এক বন্ধু নেউল, পাঁচ বন্ধুতে খুব ভাব, তাহারা বনের ভিতরে থাকে আর শিকার ধরিয়া খায়।
সব দিন সমান শিকার মিলে না, কোনদিন ছোট, কোনদিন বড়। ইহার মধ্যে একদিন খুব বড় একটা হরিণ কোথা হইতে সেখানে আসিল। হরিণ দেখিয়া পাঁচ বন্ধুর বড়ই আনন্দ হইল, তাহারা বলিল, “আজ এই হরিণ মারিয়া পেট ভরিয়া খাইব!”
অমনি বাঘ ছুটিল, বৃক ছুটিল, শিয়াল ছুটিল, নেউল ছুটিল। হরিণও তাহাদিগকে দেখিয়া প্রাণের ভয়ে ছুটিতে লাগিল। সে হরিণ ছিল তাহার দলের সর্দার! তাহার গায় আর পায় ভয়ানক জোর। মাথায় তেমনি মস্ত শিং। তাহার সঙ্গে ছুটাছুটি করিয়া পাঁচ বন্ধুর এই লম্বা লম্বা জিব বাহির হইয়া পড়িল, তাহার শিং নাড়া দেখিয়া ভয়ে তাহাদের প্রাণ উড়িয়া গেল!
তখন শিয়াল বলিল, “বাঘ মামা, ওর গায়ে বড় জোর, ওকে অমনি কাবু করিতে পারিবে না। চল, আমরা চুপি চুপি ঝোপের ভিতরে লুকাইয়া থাকি। তারপর যখন হরিণটা ঘুমাইয়া পড়িবে, তখন ইঁদুর গিয়া খ্যাঁচ করিয়া তাহার পায়ের শির কাটিয়া দিবে। তখন আর সে ছুটিতেও পারিবে না, গুঁতাইতেও পারিবে না। তাহা হইলেই আমরা তাহাকে মারিয়া, মনের সুখে পেট ভরিয়া খাইব।”
বাঘ বলিল, “বেশ বলিয়াছ ভাগ্নে, তবে তাহাই হউক।”
বৃক, নেউল, আর ইদুরও একসঙ্গে বলিল, “হাঁ, হাঁ! তবে তাহাই হউক!”
তারপর ইঁদুর ঘুমের ভিতর যেই হরিণের পায়ের শির কাটিয়া দিল, অমনি বাঘ তাহার ঘাড় ভাঙিয়া ফেলিল।
তখন শিয়াল নাচিতে নাচিতে বলিল, “বাঃ! বাঃ! ইদুর বন্ধুর দাঁতে কেমন ধার, আর বাঘ মামার গায়ে কি জোর! এখন সকলে মিলিয়া হরিণটাকে খাইতে হইবে। তোমরা শীঘ্র শীঘ্র স্নান করিয়া আইস, ততক্ষণে আমি এটাকে পাহারা দিই!”
শিয়ালের কথায় আর সকলে স্নান করিতে গেল, আর সে ঘাড় উঁচু করিয়া, কান খাড়া করিয়া, খুব গম্ভীরভাবে বসিয়া যেন কতই পাহারা দিতে লাগিল। খানিক বাদে বাঘ স্নান করিয়া আসিয়া দেখিল, শিয়ালের মুখ বড়ই ভার, যেন সে যার পর নাই ভাবনায় পড়িয়াছে।